Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

সূরা আল বুরুজ বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ | সূরা বুরুজ এর তাফসীর

 

সুরা বুরুজ, সূরা আল বুরুজ বাংলা অনুবাদ, সুরা বুরুজ বাংলা অনুবাদ, সূরা আল বুরুজ, সুরা বুরুজ এর তাফসীর।

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। আমার দ্বীনী ভাই ও বোনেরা আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রিয়  ভাই ও বোনেরা আজ আমি আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম:- সুরা বুরুজ, সূরা আল বুরুজ বাংলা অনুবাদ, সুরা বুরুজ বাংলা অনুবাদ, সূরা আল বুরুজ, সুরা বুরুজ এর তাফসীর।তো দেরি না করে আসুন আমরা পড়া শুরু।

সুরা বুরুজ | সূরা আল বুরুজ বাংলা অনুবাদ | সুরা বুরুজ বাংলা অনুবাদ | সূরা আল বুরুজ 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْبُرُوجِ 85.1
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১) অস্সামা-য়ি যা-তিল্ বুরূজ্বি
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১) কক্ষপথ বিশিষ্ট আসমানের কসম,
وَالْيَوْمِ الْمَوْعُودِ 85.2
আরবি উচ্চারণ
৮৫.২) অল্ইয়াওমিল্ মাও‘ঊদি।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.২) আর ওয়াদাকৃত দিনের কসম,
وَشَاهِدٍ وَمَشْهُودٍ 85.3
আরবি উচ্চারণ
৮৫.৩) অশা-হিদিঁও অমাশ্হূদ্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.৩) আর কসম সাক্ষ্যদাতার এবং যার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া হবে তার,
قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ 85.4
আরবি উচ্চারণ
৮৫.৪) কুতিলা আছ্হা-বুল্ উখ্দূদি।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.৪) ধ্বংস হয়েছে গর্তের অধিপতিরা,
النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ 85.5
আরবি উচ্চারণ
৮৫.৫) আন্না-রি যা-তিল্ অকুদি
বাংলা অনুবাদ
৮৫.৫) যাতে ছিল ইন্ধনপূর্ণ আগুন।
إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ 85.6
আরবি উচ্চারণ
৮৫.৬) ইয্হুম্ ‘আলাইহা-কুঊ’দুঁও।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.৬) যখন তারা তার কিনারায় উপবিষ্ট ছিল।
وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ 85.7
আরবি উচ্চারণ
৮৫.৭) অহুম্ ‘আলা-মা-ইয়াফ্‘আলূনা বিল্মুমিনীনা শুহূদ্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.৭) আর তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তার প্রত্যক্ষদর্শী।
وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ 85.8
আরবি উচ্চারণ
৮৫.৮) অমা-নাক্বমূ মিন্হুম্ ইল্লা য় আইঁ ইয়ুমিনূ বিল্লা-হিল্ ‘আযীযিল্ হামীদি।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.৮) আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।
الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ 85.9
আরবি উচ্চারণ
৮৫.৯) ল্লাযী লাহূ মুল্কুস্ সামা-ওয়া-তি অল্ র্আদ্ব; অল্লা-হু ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন্ শাহীদ্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.৯) আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব যার। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী।
إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ 85.10
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১০) ইন্নাল্লাযীনা ফাতানুল্ মুমিনীনা অল্মুমিনা-তি ছুম্মা লাম্ ইয়াতূবূ ফালাহুম্ ‘আযা-বু জ্বাহান্নামাঅলাহুম্ ‘আযা-বুল্ হারীক্ব্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১০) নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে আযাব দেয়, তারপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর তাদের জন্য রয়েছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার আযাব।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ 85.11
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১১) ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূ অ‘আমিলুছ্ ছোয়া-লিহা-তি লাহুম্ জ্বান্না-তুন্ তাজরী মিন্ তাহ্তিহাল্ আন্হার্-; যা-লিকাল্ ফাওযুল্ কার্বী।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১১) নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।
إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ 85.12
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১২) ইন্না বাতশা রব্বিকা লাশাদীদ্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১২) নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন।
إِنَّهُ هُوَ يُبْدِئُ وَيُعِيدُ 85.13
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১৩) ইন্নাহূ হুওয়া ইয়ুব্দিয়ু অইয়ু‘ঈদ্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১৩) নিশ্চয় তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন।
وَهُوَ الْغَفُورُ الْوَدُودُ 85.14
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১৪) অহুওয়াল্ গফূরুল্ ওয়াদূদু
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১৪) আর তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, প্রেমময়।
ذُو الْعَرْشِ الْمَجِيدُ 85.15
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১৫) যুল্ ‘র্আশিল্ মাজ্বীদু
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১৫) আরশের অধিপতি, মহান।
فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ 85.16
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১৬) ফা’আ’লুল্ লিমা- ইয়ুরীদ্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১৬) তিনি তা-ই করেন যা চান ।
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْجُنُودِ 85.17
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১৭) হাল্ আতা-কা হাদীছুল্ জুনূ দি
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১৭) তোমার কাছে কি সৈন্যবাহিনীর খবর পৌঁছেছে?
فِرْعَوْنَ وَثَمُودَ 85.18
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১৮) র্ফি‘আউনা অছামূদ্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১৮) ফির‘আউন ও সামূদের।
بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي تَكْذِيبٍ 85.19
আরবি উচ্চারণ
৮৫.১৯) বালিল্লাযীনা কাফারূ ফী তাক্যীবিঁও
বাংলা অনুবাদ
৮৫.১৯) বরং কাফিররা মিথ্যারোপে লিপ্ত।
وَاللَّهُ مِنْ وَرَائِهِمْ مُحِيطٌ 85.20
আরবি উচ্চারণ
৮৫.২০) অল্লা-হু মিওঁ অরা য় য়িহিম্ মুহীত্ব্।
বাংলা অনুবাদ
৮৫.২০) আর আল্লাহ তাদের অলক্ষ্যে তাদের পরিবেষ্টনকারী।
بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَجِيدٌ 85.21
আরবি উচ্চারণ
৮৫.২১) বাল্ হুওয়া কুরআ-নুম্ মাজ্বীদুন্
বাংলা অনুবাদ
৮৫.২১) বরং তা সম্মানিত কুরআন।
فِي لَوْحٍ مَحْفُوظٍ 85.22
আরবি উচ্চারণ
৮৫.২২) ফী লাওহিম্ মাহ্ফূজ্
বাংলা অনুবাদ
৮৫.২২) সুরক্ষিত ফলকে (লিপিবদ্ধ)।

সূরা বুরুজ এর তাফসীর 

হাদিস নাম্বার ৩৩৩৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, (রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল ইয়াউমুল মাওঊদ”- (সূরা বুরূজ ২) অর্থ-ক্বিয়ামাতের দিন; “আল-ইয়াউমুল মাশ্হুদ “-(সূরা হূদ ১০৩) অর্থ-আরাফাতে (উপস্থিতির) দিন এবং “আশ্-শাহিদ (সূরা বুরূজ ৩) অর্থ- জুমুআর দিন। রসুলুল্লাহ (“সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামʼʼ) আরো বলেনঃ যে সমস্ত দিন সূর্য উদিত হয় ও অস্ত যায় তার মাঝে জুমুআর দিনের তুলনায় বেশি ভালো কোন দিন নেই। এ দিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, ঠিক সে সময় কোন মুমিন বান্দা আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করলে তার প্রার্থনা তিনি ক্ববূল করেন এবং যে বস্তু (“অনিষ্টʼʼ) হইতে সে আশ্রয় প্রার্থনা করে তা হইতে তিনি তাকে আশ্রয় দান করেন।
হাসানঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (হাঃ ১৩৬২) সহীহ হাদীস সিরিজ (হাঃ ১৫০২)
আলী ইবনি হুজর-কুররান ইবনি তাম্মাম আল-আসাদী হইতে, তিনি মূসা ইবনি উবাইদাহ্ র সনদে উপরোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। মূসা ইবনি উবাইদাহ্ আর-রাবাযীর উপনাম আবু আবদুল আযীয। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান প্রমুখ তার স্মরনশক্তির দুর্বলতার সমালোচলা করিয়াছেন। অবশ্য শুবাহ্, সুফ্ইয়ান আস্- সাওরী প্রমুখ ইমামগন মূসা ইবনি উবাইদাহ্ হইতে হাদীস হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।
এ হাদীস কেবল মূসা ইবনি উবাইদাহ্ র সনদেই আমরা অবগত হয়েছি। হাদীসশাস্ত্রে মূসা ইবনি উবাইদাকে দুর্বল আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ প্রমুখ তাকে তার স্মৃতিশক্তির দিক হইতে কমজোড় বলেছেন।
সুরা বুরুজ তাফসীর — এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
 হাদিস নাম্বার ৩৩৪০
সুহাইব ইবনি সিনান আর-রূমী (রাদি.) হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (“সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামʼʼ) আসরের নামায আদায় করার পর নিঃশব্দে কিছু তিলাওয়াত করিতেন। কারো মতে হামস অর্থ ঠোঁট নাড়ানো। যেন তিনি কথা বলছেন। তাই তাঁকে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আসরের নামায আদায় করার পর আপনি ঠোঁট নেড়ে থাকেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলার একজন নাবী তাহাঁর উম্মাতের (“সংখ্যাধিক্যেরʼʼ) জন্য অধিক খুশী হন। তাই তিনি মনে মনে বলেন, কারা তাহাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারে! সে সময় আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নিকট ওয়াহী পাঠানঃ তাহাদেরকে দুটি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণের এখতিয়ার দাওঃ হয় তাহাদের উপর আমি প্রতিশোধ নিব কিংবা শত্রুবাহিনীকে তাহাদের উপর আধিপত্য দান করব। তারা প্রতিশোধ নেয়াকে এখতিয়ার করিল। অতঃপর তাহাদের উপর আল্লাহ তাআলা মৃত্যু চাপিয়ে দিলেন, ফলে এক দিনেই তাহাদের সত্তর হাজার লোক মারা গেল।
সহীহঃ তাখরীজ আল-কালিমুত্ তাইয়্যিব (হাঃ ১২৫/৮৩)
বর্ণনাকারী বলেন, যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা উদ্বৃত করিতেন সে সময় এর সঙ্গে তিনি আরো একটি ঘটনা বলিতেন। তিনি বলেনঃ জনৈক বাদশার এক যাদুকর ছিল। বাদশাকে সে ভবিষ্যদ্বাণী শুনাত। যাদুকরটি লোকদেরকে বলল, আমাকে তোমরা একটি বুদ্ধিমান, সাবধানী ও ধিশক্তি সম্পন্ন বালক এনে দাও। আমি তাকে আমার জ্ঞান শিখিয়ে দিব। কারন আমার মনে হচ্ছে যে, আমি মারা গেলে আমার এ বিদ্যা হইতে তোমরা বঞ্চিত হইবে। তোমাদের মাঝে এই সম্পন্ন আর কেউ থাকিবে না। তিনি বলেনঃ লোকেরা [যাদুকরের] কথামত একটি বুদ্ধিমান ছেলে খুঁজে বের করে এবং তাকে সেই যাদুকরের নিকট প্রত্যহ যাতায়াতের ও তার সাহচর্য লাভের আদেশ দেয়। ছেলেটি সেই যাদুকরের নিকট যাতায়াত করিতে থাকে। ছেলেটির যাওয়া-আসার পথে একটি গীর্জায় এক পাদরী (“রাহেবʼʼ) অবস্থানরত ছিল। বর্ণনাকারী মামার বলেন, আমার বিশ্বাস সে সময় গীর্জার পাদরীগন তাওহীদের বিশ্বাসী মুসলমান ছিলেন। সে এ পাদরীর কাছ দিয়ে যাতায়াতকালে তার নিকট (“দীন প্রসঙ্গেʼʼ) প্রশ্ন করত। অবশেষে সে বলল, আমি আল্লাহ তাআলার ইবাদত করি। তারপর পাদরীর নিকট ছেলেটি অবস্থান করিতে শুরু করে এবং যাদুকরের নিকট বিলম্বে উপস্থিত হয়। যাদুকর ছেলের অভিভাবকে বলে পাঠায় যে আমার আশঙ্কা হয় সে আমার নিকট আসবে না। বালক পাদরীকে এ বিষয়টি অবহিত করলে তিনি তাকে বলেন, তুমি কোথায় ছিলে যাদুকর তোমাকে এ প্রশ্ন করলে তুমি বলবে, আমি বাড়ীতে ছিলাম। আর তোমাকে অভিভাবকরা প্রশ্ন করলে তুমি বলবে, আমি যাদুকরের নিকট ছিলাম। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ এভাবে বেশ কিছু দিন বালকটির কেটে গেল। একদিন সে এক বিরাট সংখ্যক লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তাহাদের পথে একটি হিংস্র জন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ বলিলেন, ঐ জন্তুটি ছিল বাঘ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ বালকটি একটি পাথর তুলে নিয়ে বলে, হে আল্লাহ! পাদরী যা বলে তা যদি সত্য হয় তাহলে আমি আপনার নিকট চাই যে, এ জন্তুটিকে আমি হত্যা করি। এ কথা বলে সে পাথরটি ছুড়ে মারল এবং জন্তুটি হত্যা করিল। লোকেরা বলল, জন্তুটি কে হত্যা করেছে? লোকেরা বলল, এ বালকটি। লোকেরা বিমর্ষ হয়ে বলল, এমন জ্ঞান সে আয়ত্ত করেছে যা আর কারো নিকটে নেই। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ এক অন্ধ লোক এ ঘটনা শুনতে পেয়ে তাকে বলল, যদি তুমি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পার তবে তোমাকে আমি এই এই পরিমান সম্পদ দিব। বালকটি তাকে বলল, তোমার নিকট আমি তা চাই না। তবে যদি তোমার দৃষ্টিশক্তি তুমি ফিরিয়ে পাও তাহলে যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিবে তাহাঁর উপর কি তুমি ইমান আনবে? অন্ধ বলল, হ্যাঁ। তারপর আল্লাহ তাআলার নিকট ছেলেটি দুআ করিল এবং আল্লাহ তাআলা তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। অন্ধ ব্যক্তিও ইমান আনল।
বিষয়টি বাদশার কানে গিয়ে পৌঁছলে সে তাহাদের ডেকে পাঠায়। তার নিকট তাহাদেরকে হাযির করা হলে সে বলল, তোমাদের প্রত্যেককে আমি এক এক নতুন পন্থায় হত্যা করব যে পন্থায় তার সঙ্গীকে হত্যা করব না। সে পাদরী ও অন্ধ লোকটিকে হত্যার হুকুম দিল এবং সে অনুযায়ী এদের একজনের মাথার উপর করাত চালিয়ে হত্যা করা হয় এবং অন্যজনকে আরেকভাবে হত্যা করা হয়। তারপর বালকটি প্রসঙ্গে বাদশা বলল, একে ঐ পর্বতে নিয়ে যাও এবং তার চূড়া হইতে তাকে ফেলে দাও। অতঃপর তারা তাকে নিয়ে সেই পর্বতে গেল। যখন তারা পাহাড়ের সেই নির্দিষ্ট জায়গা হইতে তাকে ফেলে দিতে প্রস্তুত হল তখন একে একে তারা সকলে পড়ে মারা গেল এবং বালকটি ব্যতীত কেউই বাকি থাকল না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ সে ফিরে এলে বাদশা তাকে নিয়ে নদীতে ডুবিয়ে মারার জন্য লোকদেরকে হুকুম দিল। তারপর তাকে নদীতে নিয়ে যাওয়া হল। আল্লাহ তাআলা বালকটির সাথী সকলকে ডুবিয়ে হত্যা করিলেন এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখলেন। পরবর্তীতে ছেলেটিই বাদশাকে বলল, আমাকে তুমি হত্যা করিতে পারবে না। তবে আমাকে তুমি শূলে চড়িয়ে “এ বালকের প্রতিপালকের নামে “বলে তীর নিক্ষেপ করলেই কেবল আমাকে হত্যা করিতে পারবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তার কথামত বাদশা হুকুম দিল এবং অতঃপর তাকে শূলে চড়িয়ে “এই বালকের প্রতিপালকের নামে “বলে তীর নিক্ষেপ করিল, ছেলেটি তার হাত তাহাঁর কান ও মাথার মাঝের জায়গায় স্থাপন করিল এবং মারা গেল।
লোকেরা বলল, এমন জ্ঞান বালকটি লাভ করেছে যা আর কেউই লাভ করিতে পারেনি। কাজেই এই বালকের প্রতিপালকের উপর আমরাও ঈমান আনলাম। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ বাদশাকে বলা হল, আপনি তো তিন ব্যক্তির বিরোধিতায় ভয় পেয়ে গেলেন। এখন সারা দুনিয়াই তো আপনার বিরোধী হয়ে গেল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ সে সময় বাদশা একটি সুদীর্ঘ র্গত খুঁড়ে তাতে কাঠ দিয়ে আগুন ধরায়, তারপর লোকদেরকে একসঙ্গে বলে, “যে তার র্ধম হইতে ফিরে আসবে তাকে ছেড়ে দিব এবং যে র্ধম হইতে না ফিরবে তাকে আমি এ আগুনে নিক্ষেপ করব”। ঈমানদার লোকদেরকে সে আগুনের গর্তে নিপতিত করিতে লাগল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ এ প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “গর্তের অধিপতিরা ধ্বংস হয়েছে,যে গর্তে আগুন প্রজ্জ্বলিত ছিল। যখন ওরা ঐ গর্তের পাশে বসা ছিল, আর ওরা ঈমানদারদের সঙ্গে যা করছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল। তারা তাহাদেরকে যুলম করছিল কেবল এ কারণে যে, তারা মহাশক্তিমান ও প্রশংসিত আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান এনেছিল”- )সূরা বুরূজ ৪-৮)। বর্ণনাকারী বলেন, বালকটিকে দাফন করা হয়েছিল।
রাবী বলেন, উল্লেখিত আছে যে, ঐ বালকের লাশ উমার (রাদি.)-এর খিলাফতকালে তোলা হয়েছিল। মারা যাওয়ার সময় তার হাত যেভাবে তার কান ও মাথার মধ্যবর্তী জায়গায় রাখা ছিল সেভাবেই তাকে পাওয়া যায়। সহীহঃ মুসলিম (৮/২২৯-২৩১) আয়াতের উল্লেখ ব্যতীত। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।
সুরা বুরুজ তাফসীর — এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Tag: সুরা বুরুজ, সূরা আল বুরুজ বাংলা অনুবাদ, সুরা বুরুজ বাংলা অনুবাদ, সূরা আল বুরুজ, সুরা বুরুজ এর তাফসীর।

Leave a comment