আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।সূরা আন নিসা বাংলা উচ্চারণ Surah An Nisa Bangla Pronunciation 2025 আমার দ্বীনী ভাই ও বোনেরা আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রিয় ভাই ও বোনেরা আজ আমি আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম:- সূরা আল নিসা বাংলা অনুবাদ, সূরা নিসা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আন নিসা বাংলা অনুবাদ সহ, সূরা নিসা আয়াত ১৫০, সূরা নিসা, সূরা আন নিসা, সূরা নিসা বাংলা অনুবাদ, সুরা নিসা তাফসির।তো দেরি না করে আসুন আমরা পড়া শুরু করি।
৪.১) হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফ্স থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।
৪.২) আর তোমরা ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দাও এবং তোমরা অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করো না এবং তাদের ধন-সম্পদকে তোমাদের ধন-সম্পদের সাথে খেয়ো না। নিশ্চয় তা বড় পাপ।
৪.৩) আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের হাত যার মালিক হয়েছে। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা যুলম করবে না।
৪.৪) আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।
৪.৫) আর তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের ধন-সম্পদ দিও না, যাকে আল্লাহ তোমাদের জন্য করেছেন জীবিকার মাধ্যম এবং তোমরা তা থেকে তাদেরকে আহার দাও, তাদেরকে পরিধান করাও এবং তাদের সাথে উত্তম কথা বল।
৪.৬) আর তোমরা ইয়াতীমদেরকে পরীক্ষা কর যতক্ষণ না তারা বিবাহের বয়সে পৌঁছে। সুতরাং যদি তোমরা তাদের মধ্যে বিবেকের পরিপক্কতা দেখতে পাও, তবে তাদের ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে দাও। আর তোমরা তাদের সম্পদ খেয়ো না অপচয় করে এবং তারা বড় হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করে। আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়। অতঃপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করবে তখন তাদের উপর তোমরা সাক্ষী রাখবে। আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।
৪.৭) পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ- তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক- নির্ধারিত হারে।
৪.৯) আর তাদের ভয় করা উচিৎ যে, যদি তারা তাদের পেছনে অসহায় সন্তান রেখে যেত, তাহলে তারা তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হত। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং যেন সঠিক কথা বলে।
৪.১১) আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৪.১২) আর তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীগণ যা রেখে গেছে তার অর্ধেক, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তারা যা রেখে গেছে তা থেকে তোমাদের জন্য চার ভাগের এক ভাগ। তারা যে অসিয়ত করে গেছে তা পালনের পর অথবা ঋণ পরিশোধের পর। আর স্ত্রীদের জন্য তোমরা যা রেখে গিয়েছ তা থেকে চার ভাগের একভাগ, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য আট ভাগের এক ভাগ, তোমরা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে। তোমরা যে অসিয়ত করেছ তা পালন অথবা ঋণ পরিশোধের পর। আর যদি মা বাবা এবং সন্তান-সন্ততি নাই এমন কোন পুরুষ বা মহিলা মারা যায় এবং তার থাকে এক ভাই অথবা এক বোন, তখন তাদের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের একভাগ। আর যদি তারা এর থেকে অধিক হয় তবে তারা সবাই তিন ভাগের এক ভাগের মধ্যে সমঅংশীদার হবে, যে অসিয়ত করা হয়েছে তা পালনের পর অথবা ঋণ পরিশোধের পর। কারো কোন ক্ষতি না করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে অসিয়তস্বরূপ। আর আল্ল¬াহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
৪.১৩) এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা ।
৪.১৪) আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।
৪.১৫) আর তোমাদের নারীদের মধ্য থেকে যারা ব্যভিচার করে, তোমরা তাদের উপর তোমাদের মধ্য থেকে চার জন সাক্ষী উপস্থিত কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য দেয় তবে তোমরা তাদেরকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রাখ যতক্ষণ না মৃত্যু তাদের জীবন শেষ করে দেয়। অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোন পথ তৈরি করে দেন।
৪.১৬) আর তোমাদের মধ্য থেকে যে দু’জন অপকর্ম করবে, তাদেরকে তোমরা আযাব দাও। অতঃপর যদি তারা তাওবা করে এবং শুধরিয়ে নেয় তবে তোমরা তাদের থেকে বিরত থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবূলকারী, দয়ালু ।
৪.১৭) নিশ্চয় তাওবা কবূল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবা করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
৪.১৮) আর তাওবা নাই তাদের, যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, আমি এখন তাওবা করলাম, আর তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়; আমি এদের জন্যই তৈরী করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
৪.১৯) হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।
৪.২০) আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে তোমরা প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদ, তবে তোমরা তা থেকে কোন কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ এবং প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে?
৪.২২) আর তোমরা বিবাহ করো না নারীদের মধ্য থেকে যাদেরকে বিবাহ করেছে তোমাদের পিতৃপুরুষগণ। তবে পূর্বে যা সংঘটিত হয়েছে (তা ক্ষমা করা হল)। নিশ্চয় তা হল অশ্লীলতা ও ঘৃণিত বিষয় এবং নিকৃষ্ট পথ।
৪.২৩) তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৪.২৪) আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে সধবাদেরকে। তবে তোমাদের হাত যাদের মালিক হয়েছে তারা ছাড়া। এটি তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে চাইবে বিবাহ করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
৪.২৫) আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন-মুমিন নারীদেরকে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না, সে (বিবাহ করবে) তোমাদের মুমিন যুবতীদের মধ্য থেকে, তোমাদের হাত যাদের মালিক হয়েছে তাদের কাউকে। আর আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তোমরা একে অন্যের থেকে (এসেছ)। সুতরাং তোমরা তাদেরকে তাদের মালিকদের অনুমতিক্রমে বিবাহ কর এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও এমতাবস্থায় যে, তারা হবে সতী-সাধ্বী, ব্যভিচারিণী কিংবা গোপন যৌনসঙ্গী গ্রহণকারিণী নয়। অতঃপর যখন তারা বিবাহিত হবে তখন যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের উপর স্বাধীন নারীর অর্ধেক আযাব হবে। এটা তাদের জন্য, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারের ভয় করে এবং ধৈর্যধারণ করা তোমাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৪.২৬) আল্লাহ চান তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শ প্রদর্শন করতে এবং তোমাদের তাওবা কবূল করতে। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
৪.২৯) হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।
৪.৩১) তোমরা যদি সেসব কবিরা গুনাহ পরিহার কর, যা থেকে তোমাদের বারণ করা হয়েছে, তাহলে আমি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাব সম্মানজনক প্রবেশস্থলে।
৪.৩২) আর তোমরা আকাক্সক্ষা করো না সে সবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের এক জনকে অন্য জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
৪.৩৩) আর আমি প্রত্যেকের জন্য নির্ধারণ করেছি উত্তরাধিকারী, পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়-স্বজন যা রেখে যায় এবং যাদের সাথে তোমরা চুক্তি করেছ, তা থেকে । সুতরাং তোমরা তাদেরকে তাদের অংশ দিয়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর সাক্ষী।
৪.৩৪) পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেনে। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান।
৪.৩৫) আর যদি তোমরা তাদের উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশঙ্কা কর তাহলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। যদি তারা মীমাংসা চায় তাহলে আল্লাহ উভয়ের মধ্যে মিল করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, সম্যক অবগত।
৪.৩৬) তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়- প্রতিবেশী, অনাত্মীয়- প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী।
৪.৩৭) যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়; আর গোপন করে তা, যা আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন। আর আমি প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাকর আযাব।
৪.৩৮) আর যারা নিজ ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং ঈমান আনে না আল্লাহর প্রতি এবং না শেষ দিনের প্রতি। আর শয়তান যার সঙ্গী হয়, সঙ্গী হিসেবে কতইনা নিকৃষ্ট সে!
৪.৩৯) তাদের এমন কী ক্ষতি হত যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং আল্লাহ তাদের যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করত? আল্লাহ তাদের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
৪.৪২) যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেদিন কামনা করবে, যদি যমীনকে তাদের সাথে (মিশিয়ে) সমান করে দেয়া হত, আর তারা আল্লাহর কাছে কোন কথা গোপন করতে পারবে না।
৪.৪৩) হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পার যা তোমরা বল এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর, তবে যদি তোমরা পথ অতিক্রমকারী হও । আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সম্ভোগ কর, তবে যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম কর । সুতরাং তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ কর। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
৪.৪৬) ইয়াহূদীদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা কালামসমূহকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে ফেলে এবং বলে, ‘আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম’। আর তুমি শোন না শোনার মত, তারা নিজদের জিহ্বা বাঁকা করে এবং দীনের প্রতি খোঁচা মেরে বলে, ‘রা‘ইনা’ । আর তারা যদি বলত, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম এবং তুমি শোন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ’ তাহলে এটি হত তাদের জন্য কল্যাণকর ও যথার্থ। কিন্তু তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন। তাই তাদের কম সংখ্যক লোকই ঈমান আনে।
৪.৪৭) হে কিতাবপ্রাপ্তগণ, তোমরা ঈমান আন, তার প্রতি যা আমি নাযিল করেছি তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে। আমি চেহারাসমূহকে বিকৃত করে তা তাদের পিঠের দিকে ফিরিয়ে দেয়া অথবা তাদেরকে লা‘নত করার পূর্বে যেমনিভাবে লা‘নত করেছি আসহাবুস্ সাবতকে । আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে।
৪.৪৮) নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।
৪.৫১) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত ও তাগূতের প্রতি ঈমান আনে এবং কাফিরদেরকে বলে, এরা মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত।
৪.৫৪) বরং তারা কি লোকদেরকে হিংসা করে, আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে? তাহলে তো আমি ইবরাহীমের বংশধরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি বিশাল রাজত্ব।
৪.৫৬) নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদেরকে পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা আস্বাদন করে আযাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৪.৫৭) আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তাদেরকে আমি প্রবেশ করাব বিস্তৃত ঘন ছায়ায়।
৪.৫৮) নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
৪.৫৯) হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।
৪.৬০) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে।
৪.৬১) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আস যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে’, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে।
৪.৬২) সুতরাং তখন কেমন হবে, যখন তাদের উপর কোন মুসীবত আসবে, সেই কারণে যা তাদের হাত পূর্বেই প্রেরণ করেছে? তারপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করা অবস্থায় তোমার কাছে আসবে যে, আমরা কল্যাণ ও সম্প্রীতি ভিন্ন অন্য কিছু চাইনি।
৪.৬৩) ওরা হল সেসব লোক, যাদের অন্তরে কি আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং তাদেরকে সদুপদেশ দাও। আর তাদেরকে তাদের নিজদের ব্যাপারে মর্মস্পর্শী কথা বল।
৪.৬৪) আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়। আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত।
৪.৬৫) অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।
৪.৬৬) আর যদি আমি তাদের উপর লিখে দিতাম যে, তোমরা নিজদের হত্যা কর কিংবা নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে যাও, তাহলে তাদের কম সংখ্যক লোকই তা বাস্তবায়ন করত। আর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয় যদি তারা তা বাস্তবায়ন করত, তাহলে সেটি হত তাদের জন্য উত্তম এবং স্থিরতায় সুদৃঢ়।
৪.৬৯) আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম।
৪.৭২) আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে, যে অবশ্যই বিলম্ব করবে। সুতরাং তোমাদের কোন বিপদ আপতিত হলে সে বলবে, ‘আল্লাহ আমার উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সাথে উপস্থিত ছিলাম না’।
৪.৭৩) আর তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অনুগ্রহ এসে পৌঁছলে অবশ্যই সে বলবে যেন তোমাদের ও তার মধ্যে কোন হৃদ্যতা ছিল না, ‘হায়! যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম, তাহলে আমি মহাসফলতা অর্জন করতাম।
৪.৭৪) সুতরাং যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রয় করে তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে। আর যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে অতঃপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী, অচিরেই আমি তাকে দেব মহা পুরস্কার।
৪.৭৫) আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে’ যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।
৪.৭৬) যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কুফরী করেছে তারা লড়াই করে তাগূতের পথে। সুতরাং তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল।
৪.৭৭) তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও এবং সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর? অতঃপর তাদের উপর যখন লড়াই ফরয করা হল, তখন তাদের একদল মানুষকে ভয় করতে লাগল আল্লাহকে ভয় করার অনুরূপ অথবা তার চেয়ে কঠিন ভয়। আর বলল, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের উপর লড়াই ফরয করলেন কেন? আমাদেরকে কেন আরো কিছুকালের অবকাশ দিলেন না’? বল, ‘দুনিয়ার সুখ সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য আখিরাত উত্তম। আর তোমাদের প্রতি সূতা পরিমাণ যুল্মও করা হবে না’।
৪.৭৮) তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর। আর যদি তাদের কাছে কোন কল্যাণ পৌঁছে তবে বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’। আর যদি কোন অকল্যাণ পৌঁছে, তখন বলে, ‘এটি তোমার পক্ষ থেকে’। বল, ‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে’। সুতরাং এই কওমের কী হল, তারা কোন কথা বুঝতে চায় না!
৪.৭৯) তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।
৪.৮১) আর তারা বলে, ‘আনুগত্য (করি)’; অতঃপর যখন তারা তোমার কাছ থেকে বের হয়ে যায়, তাদের একদল যা বলে, রাতে তার বিপরীত পরিকল্পনা করে। আর আল্লাহ লিখে রাখেন, তারা রাতে যা পরিকল্পনা করে। সুতরাং তুমি তাদেরকে এড়িয়ে চল এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর। কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
৪.৮৩) আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোন বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। আর যদি তারা সেটি রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে।
৪.৮৪) অতএব তুমি আল্লাহর রাস্তায় লড়াই কর। তুমি শুধু তোমার নিজের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ কর। আশা করা যায় আল্লাহ অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং শাস্তিদানে কঠোরতর।
৪.৮৫) যে ভাল সুপারিশ করবে, তা থেকে তার জন্য একটি অংশ থাকবে এবং যে মন্দ সুপারিশ করবে তার জন্যও তা থেকে একটি অংশ থাকবে। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের সংরক্ষণকারী।
৪.৮৭) আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে?
৪.৮৮) সুতরাং মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমাদের কী হল যে, তোমরা দু’ দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তারা যা কামাই করেছে তার জন্য তাদেরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন তোমরা কি তাকে হিদায়াত করতে চাও? আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না।
৪.৮৯) তারা কামনা করে, যদি তোমরা কুফরী করতে যেভাবে তারা কুফরী করেছে। অতঃপর তোমরা সমান হয়ে যেতে। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে কাউকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। অতএব তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং তাদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর। আর তাদের কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না এবং না সাহায্যকারীরূপে।
৪.৯০) তবে (তাদেরকে হত্যা করো না) যারা মিলিত হয় এমন কওমের সাথে, যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে। অথবা তোমাদের কাছে আসে এমন অবস্থায় যে, তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে কিংবা তাদের কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাদের মন সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে। আর আল্লাহ চাইলে অবশ্যই তাদেরকে তোমাদের উপর ক্ষমতা দিতে পারতেন। অতঃপর নিশ্চিতরূপে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত। অতএব তারা যদি তোমাদের থেকে সরে যায় অতঃপর তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের কাছে শান্তি প্রস্তাব উপস্থাপন করে, তাহলে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ রাখেননি।
৪.৯১) তোমরা অচিরেই অন্য লোককে পাবে, যারা তোমাদের কাছে নিরাপত্তা চাইবে এবং নিরাপত্তা চাইবে তাদের কওমের কাছে। যখনই তাদেরকে ফিতনার দিকে ফিরানো হয়, তারা সেখানে ফিরে যায়। সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে সরে না যায় এবং তোমাদের কাছে সন্ধি প্রস্তাব উপস্থাপন না করে এবং নিজদের হাত গুটিয়ে না নেয়, তাহলে তাদেরকে পাকড়াও করবে এবং হত্যা করবে যেখানেই তাদের নাগাল পাবে। আর ওরাই তারা, যাদের বিরুদ্ধে আমি তোমাদেরকে সুস্পষ্ট ক্ষমতা দিয়েছি।
৪.৯২) আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত (হলে ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে দিতে হবে না)। আর সে যদি তোমাদের শত্র“ কওমের হয় এবং সে মুমিন, তাহলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি এমন কওমের হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে তাহলে দিয়াত দিতে হবে, যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিবারের কাছে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করতে হবে। তবে যদি না পায় তাহলে একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৪.৯৩) আর যে ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন।
৪.৯৪) হে মুমিনগণ, যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হবে তখন যাচাই করবে এবং যে তোমাদেরকে সালাম দেবে দুনিয়ার জীবনের সম্পদের আশায় তাকে বলবে না যে, ‘তুমি মুমিন নও’। বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে প্রচুর গনীমত আছে। তোমরাতো পূর্বে এরূপই ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন। সুতরাং তোমরা যাচাই করবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।
৪.৯৫) বসে থাকা মুমিনগণ, যারা ওযরগ্রস্ত নয় এবং নিজদের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীগণ এক সমান নয়। নিজদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদকারীদের মর্যাদা আল্লাহ বসে থাকাদের উপর অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ প্রত্যেককেই কল্যাণের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন এবং আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে বসে থাকাদের উপর মহা পুরস্কার দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন
৪.৯৭) নিশ্চয় যারা নিজদের প্রতি যুলমকারী, ফেরেশতারা তাদের জান কবজ করার সময় বলে, ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে’? তারা বলে, ‘আমরা যমীনে দুর্বল ছিলাম’। ফেরেশতারা বলে, ‘আল্লাহর যমীন কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা তাতে হিজরত করতে’? সুতরাং ওরাই তারা যাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। আর তা মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল।
৪.১০০) আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৪.১০১) আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের সালাত কসর করাতে কোন দোষ নেই। যদি আশঙ্কা কর যে, কাফিররা তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলবে। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“।
৪.১০২) আর যখন তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তাদের জন্য সালাত কায়েম করবে, তখন যেন তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা তাদের অস্ত্র ধারণ করে। এরপর যখন সিজদা করে ফেলবে, তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর একটি দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সাথে এসে সালাত আদায় করে এবং তারা যেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন ও অস্ত্র ধারণ করে। কাফিররা কামনা করে যদি তোমরা তোমাদের অস্ত্র-শস্ত্র ও আসবাব-পত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও তাহলে তারা তোমাদের উপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কোন কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তাহলে অস্ত্র রেখেদেয়াতে তোমাদের কোন দোষ নেই। আর তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছেন লাঞ্ছনাদায়ক আযাব।
৪.১০৩) অতঃপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।
৪.১০৪) আর শত্র“ সম্প্রদায় অনুসন্ধানে তোমরা দুর্বল হয়ো না। যদি তোমরা ব্যথা পেয়ে থাক তাহলে তারাও তো ব্যথা পাচ্ছে, যেভাবে তোমরা ব্যথা পাচ্ছ। আর তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে আশা করছ যা তারা আশা করছে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৪.১০৫) নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।
৪.১০৮) তারা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, আর আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে চায় না। অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন তারা রাতে এমন কথার পরিকল্পনা করে যা তিনি পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ তারা যা করে তা পরিবেষ্টন করে আছেন।
৪.১০৯) হে, তোমরাই তো তারা, যারা দুনিয়ার জীবনে তাদের পক্ষে বিতর্ক করেছ। সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের পক্ষে আল্লাহর সাথে কে বিতর্ক করবে? কিংবা কে হবে তাদের তত্ত্বাবধায়ক
৪.১১২) আর যে ব্যক্তি কোন অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।
৪.১১৩) আর তোমার উপর যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না হত তবে তাদের মধ্য থেকে একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করার সংকল্প করেই ফেলেছিল! আর তারা নিজদের ছাড়া কাউকে পথভ্রষ্ট করে না এবং তারা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান।
৪.১১৪) তাদের গোপন পরামর্শের অধিকাংশে কোন কল্যাণ নেই। তবে (কল্যাণ আছে) যে নির্দেশ দেয় সদাকা কিংবা ভালো কাজ অথবা মানুষের মধ্যে মীমাংসার। আর যে তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করবে তবে অচিরেই আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করব।
৪.১১৫) আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ।
৪.১১৯) ‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেব এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ দেব, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে’। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হল।
৪.১২২) আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, অচিরেই তাদেরকে আমি প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। আল্লাহর প্রতিশ্র“তি সত্য। আর কথায় আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী কে?
৪.১২৩) না তোমাদের আশায় এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ হবে)। যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
৪.১২৪) আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুরবীচির আবরণ পরিমাণ যুল্মও করা হবে না।
৪.১২৫) আর দীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজকে পূর্ণ সমর্পণ করল এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের আদর্শ অনুসরণ করল? আর আল্লাহ ইবরাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
৪.১২৭) তারা তোমার কাছে নারীদের ব্যাপারে সমাধান চায়। বল, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন এবং সমাধান দিচ্ছে ঐ আয়াতসমূহ যা কিতাবে তোমাদেরকে পাঠ করে শুনানো হয় ইয়াতীম নারীদের ব্যাপারে। যাদেরকে তোমরা প্রদান কর না যা তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহী হও। আর দুর্বল শিশুদের ব্যাপারে ও ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে। আর তোমরা যে কোন ভালো কাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে পরিজ্ঞাত।
৪.১২৮) যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোন দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোন মীমাংসা করলে তাদের কোন অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
৪.১২৯) আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না। সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে তোমরা (অপরকে) ঝুলন্তের মত করে রাখবে। আর যদি তোমরা মীমাংসা করে নাও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৪.১৩১) আল্লাহর জন্যই রয়েছে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে যমীনে। আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর যদি কুফরী কর তাহলে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে যমীনে সব আল্লাহরই। আর আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসিত।
৪.১৩৫) হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
৪.১৩৬) হে মুমিনগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে।
৪.১৩৭) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে, আবার ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে, এরপর কুফরীকে বাড়িয়ে দিয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করার নন এবং তাদেরকে পথ প্রদর্শন করার নন।
৪.১৪০) আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।
৪.১৪১) যারা তোমাদের ব্যাপারে (অকল্যাণের) অপেক্ষায় থাকে, অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি তোমাদের বিজয় হয় তবে তারা বলে, ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না’? আর যদি কাফিরদের আংশিক বিজয় হয়, তবে তারা বলে, ‘আমরা কি তোমাদের উপর কর্তৃত্ব করিনি এবং মুমিনদের কবল থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করিনি’? সুতরাং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার করবেন। আর আল্লাহ কখনো মুমিনদের বিপক্ষে কাফিরদের জন্য পথ রাখবেন না।
৪.১৪২) নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়া। অথচ তিনি তাদের ধোঁকা (-এর জবাব) দান কারী। আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদেরকে দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।
৪.১৪৬) তবে যারা তাওবা করে নিজদেরকে শুধরে নেয়, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর জন্য নিজদের দীনকে খালেস করে, তারা মুমিনদের সাথে থাকবে। আর অচিরেই আল্লাহ মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন।
৪.১৫০) নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়।
৪.১৫২) আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করেনি, তাদেরকে অচিরেই তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৪.১৫৩) কিতাবীগণ তোমার নিকট চায় যে, আসমান থেকে তুমি তাদের উপর একটি কিতাব নাযিল কর। অথচ তারা মূসার কাছে এর চেয়ে বড় কিছু চেয়েছিল, যখন তারা বলেছিল, ‘আমাদেরকে সামনাসামনি আল্লাহকে দেখাও’। ফলে তাদেরকে তাদের অন্যায়ের কারণে বজ্র পাকড়াও করেছিল। অতঃপর তারা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করল, তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পরও। তারপর আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং মূসাকে দিয়েছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ।
৪.১৫৪) আর তাদের অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য তূরকে তাদের উপর তুলে ধরেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘দরজায় প্রবেশ কর অবনত হয়ে’। তাদেরকে আমি আরও বলেছিলাম, ‘শনিবারে সীমালঙ্ঘন করো না’ এবং আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
৪.১৫৫) অতঃপর (তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছিল) তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করা, অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করা এবং এ কথা বলার কারণে যে, ‘আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত’। বরং আল্লাহ তাদের কুফরীর কারণে অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছিলেন। সুতরাং স্বল্পসংখ্যক ছাড়া তারা ঈমান আনবে না।
৪.১৫৭) এবং তাদের (এই) কথার কারণে যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি’। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল, অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।
৪.১৬০) সুতরাং ইয়াহূদীদের যুলমের কারণে আমি তাদের উপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেককে তাদের বাধা প্রদানের কারণে।
৪.১৬১) আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অবৈধভাবে মানুষের সম্পদ খাওয়ার কারণে। আর আমি তাদের মধ্য থেকে কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
৪.১৬২) লা-কির্নি র-সিখূনা ফিল্‘ ‘ইল্মি মিন্হুম্ অল্ মুমিনূনা ইয়ুমিনূনা বিমা য় উন্যিলা ইলাইকা অমা য় উন্যিলা মিন্ ক্বব্লিকা অল্ মুক্বীমীনাছ্ ছলা -তা অল্ মুতূনায্ যাকা-তা অল্মুমিনূনা বিল্লা-হি অল্ ইয়াওমিল্ আ-র্খি; করে নামায, যাকাত দেয়, যারা আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে তাদেরকে উলা – য়িকা, সানুতীহিম্ আজ্ব ্রান্ ‘আজীমা-
বাংলা অনুবাদ
৪.১৬২) কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে পরিপক্ক এবং মুমিনগণ- যারা তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং যা নাযিল হয়েছে তোমার পূর্বে- তাতে ঈমান আনে। আর যারা সালাত প্রতিষ্ঠাকারী ও যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান আনয়নকারী, তাদেরকে অচিরেই আমি মহাপুরস্কার প্রদান করব।
৪.১৬৩) নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট এবং আমি ওহী পাঠিয়েছি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া‘কূব, তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকট এবং দাঊদকে প্রদান করেছি যাবূর।
৪.১৬৫) আর (পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোন অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৪.১৬৬) কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, যা তোমার নিকট তিনি নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে। তিনি তা নাযিল করেছেন নিজ জ্ঞানে এবং ফেরেশতারাও সাক্ষ্য দিচ্ছে। আর আল্লাহই সাক্ষীরূপে যথেষ্ট।
৪.১৭০) হে মানুষ, অবশ্যই তোমাদের নিকট রাসূল এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যদি কুফরী কর, তবে নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনে যা রয়েছে, তা আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৪.১৭১) হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, ‘তিন’। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসমূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে যমীনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
৪.১৭২) মাসীহ কখনো আল্লাহর বান্দা হতে (নিজকে) হেয় মনে করে না এবং নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারাও না আর যারা তাঁর ইবাদাতকে হেয় জ্ঞান করে এবং অহঙ্কার করে, তবে অচিরেই আল্লাহ তাদের সবাইকে তাঁর নিকট সমবেত করবেন।
৪.১৭৩) পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি তাদেরকে তাদের পুরস্কার পরিপূর্ণ দেবেন এবং তাঁর অনুগ্রহে তাদেরকে বাড়িয়ে দেবেন। আর যারা হেয় জ্ঞান করেছে এবং অহঙ্কার করেছে, তিনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং তারা তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
৪.১৭৫) অতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাকে আঁকড়ে ধরেছে তিনি অবশ্যই তাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে দয়া ও অনুগ্রহে প্রবেশ করাবেন এবং তাঁর দিকে সরল পথ দেখাবেন।
৪.১৭৬) তারা তোমার কাছে সমাধান চায়। বল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন ‘কালালা’ সম্পর্কে। কোন ব্যক্তি যদি মারা যায় এমন অবস্থায় যে, তার কোন সন্তান নেই এবং তার এক বোন রয়েছে, তবে সে যা রেখে গিয়েছে বোনের জন্য তার অর্ধেক, আর সে (মহিলা) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। কিন্তু যদি তারা (বোনেরা) দু’জন হয়, তবে সে যা রেখে গিয়েছে তাদের জন্য তার দুই তৃতীয়াংশ। আর যদি তারা কয়েক ভাই বোন পুরুষ ও নারী হয়, তবে পুরুষের জন্য দুই নারীর অংশের সমান হবে’। আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
৪.১৫০) নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়।
সুরা নিসা তাফসির
হাদিস নাম্বার ৩০১৫
মুহাম্মদ ইবনিল মুনকাদির [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি অসুস্থ হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে আসেন। আমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। আমার চেতনা ফিরে পাওয়ার পর আমি বললাম, আমি আমার ধন-সম্পদ প্রসঙ্গে কিভাবে সিদ্ধান্ত করব? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার বিষয়ে নীরব থাকলেন। তারপর আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ এক পুরুষের [পুত্রের] অংশ দুজন মহিলার [কন্যার] সমান” – [সূরা আন –নিসা ১১]।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২৭২৮], বোখারি [৪৫৭৭], মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনিল মুনকাদির হইতে একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। আল – ফাযল ইবনিস সাব্বাহ আল – বাগদাদী-সুফইয়ান ইবনি উয়াইনাহ হইতে, তিনি মুহাম্মদ ইবনিল মুনকাদির হইতে, তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আল – ফাযল ইবনিস সাব্বাহর হাদীসে এ হাদীসের চেয়ে আরো বেশী বর্ণনা আছে।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০১৬
আবু সাঈদ আল –খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কয়েকজন মহিলা আওতাস যুদ্ধের দিন আমাদের হস্তগত হয়, যাদের স্বামীরা মুশরিকদের মধ্যে বর্তমান ছিল। তাই ঐ সব মহিলাকে আমাদের কিছু সংখ্যক লোক অপছন্দ করিল। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” – [সূরা আন –নিসা ২৪]।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [১৮৭১], মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০১৭
আবু সাঈদ আল –খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আওতাস যুদ্ধের দিন কয়েকজন বন্দী মহিলা আমাদের হাতে আসে যাদের স্বামীরা তাহাদের সম্প্রদায়ে বর্তমান ছিল। সাহাবীগণ বিষয়টি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে অবহিত করেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় : “এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত সকল সধবা নারী তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” – [সূরা আন –নিসা ২৪]।
সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সুফইয়ান সাওরী [রঃ]এভাবে উসমান আল –বাত্তী হইতে, তিনি আবুল খালীল হইতে, তিনি আবু সাঈদ আল –খুদরী [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের মত বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য এ হাদীসে আবু আলক্বামার উল্লেখ নেই। ক্বাতাদাহ [রঃ]এর সূত্রে হাম্মাম ব্যতীত অপর কেউ এ হাদীসের সনদে আবু আলক্বামার উল্লেখ করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। আবুল খালীলের নাম সালিহ ইবনি আবু মারইয়াম।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০১৮
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] কাবীরা গুনাহ প্রসঙ্গে বলেনঃ তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সাথে শারীক করা, বাবা-মার অবাধ্য হওয়া, নরহত্যা করা ও মিথ্যা বলা।
সহীহ : গাইয়াতুল মারাম [২৭৭], বোখারি ও মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। রাওহ ইবনি উবাদাহ [রঃ]শুবাহ [রঃ]হইতে এটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি সনদে [বর্ণনাকারীর নাম উবাইদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর -এর পরিবর্তে] আবদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর বলেছেন, তা সঠিক নয়।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০১৯
আবদুর রাহমান ইবনি আবু বাকরাহ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেলেন : আমি কি সবচাইতে মারাত্মক কবীরা গুনাহগুলো প্রসঙ্গে তোমাদেরকে অবহিত করবো না? সাহাবীগণ বলিলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থাপন, বাবা-মার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন, এবার উঠে সোজা হয়ে বসে বললেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা কথা বলা। আবু বাকর [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথাটি বারবার বলে যাচ্ছিলেন। এমনকি আমরা বললাম, আহা! তিনি যদি চুপ হইতেন।
সহীহ : প্রাগুক্ত, বোখারি, মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২০
আবদুল্লাহ ইবনি উনাইস আল – জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মারাত্মক মারাত্মক কাবীরা গুনাহ হল – আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থাপন করা, বাবা-মার নাফারমানী করা এবং মিথ্যা শপথ করা। কেউ আল্লাহ তাআলার নামে অপরিবর্তনীয় ও অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রযুক্ত হওয়ার মত শপথ করলে এবং তাতে মশার পাখা বরাবর নগণ্য মিথ্যাও যোগ করলে তা তার অন্তরে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত একটি কলংকময় দাগ হয়ে বিরাজিত থাকিবে।
হাসান : মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৩৭৭৭]।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু উমামা আল – আনসারী [রাদি.] হলেন সালাবার ছেলে। তার নাম আমাদের জানা নেই। তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২১
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থাপন করা, বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া, অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা শপথ করা। বর্ণনাকারী শুবাহর সন্দেহ যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শেষোক্ত দুটি কথার কোনটি বলেছেন।
সহীহ : বোখারি।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২২
মুজাহিদ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
উম্মু সালামাহ [রাদি.] বলেন, পুরুষরা জিহাদ করে কিন্তু মহিলারা জিহাদ করে না। মীরাসের [উত্তরাধিকার] ক্ষেত্রেও মহিলারা [পুরুষের তুলনায়] অর্ধেক পায়। এ প্রসঙ্গেই কল্যাণময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা যদ্দারা তোমাদের কাউকে অপর কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন, তোমরা তার লোভ করো না। যা পুরুষ অর্জন করেছে তা তার প্রাপ্য অংশ আর নারী যা অর্জন করিয়াছেন তা তার প্রাপ্য অংশ। তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট তার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ” – [সূরা আন – নিসা ৩২]। মুজাহিদ [রঃ]বলেন, একই প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াতও অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, লজ্জাস্থান হিফাযাতকারী পুরুষ ও লজ্জাস্থান হিফাযাতকারী নারী, আল্লাহ তাআলাকে বেশী স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহ তাআলাকে বেশী স্মরণকারী নারী এদের জন্য আল্লাহ তাআলা রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান” – [সূরা আল –আহযাব ৩৫]। উম্মু সালামাহ [রাদি.]-ই ছিলেন মাদীনায় হিজরতকারিনী প্রথম মহিলা।
সনদ সহীহ।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি মুরসাল। কেউ কেউ ইবনি আবু নাজীহ কর্তৃক মুজাহিদ [রঃ]সূত্রে এটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন যে, উম্ম সালামা [রাদি.] একই কথা বলেছেন।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২৩
উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা স্ত্রীলোকদের হিজরাত প্রসঙ্গে উল্লেখ করিয়াছেন বলে আমি শুনিনি। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ কোন নর বা নারীর কাজকে বিফল করি না। তোমরা একে অপরের অংশ। অতএব যারা হিজরাত করেছে, নিজেদের আবাস হইতে উৎখাৎ হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে …..” – [সূরা আ-লি ইমরান ১৯৫]।
পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২৪
আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে হুকুম দিলেন তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনানোর জন্য। তখন তিনি মিম্বরে বসা ছিলেন। আমি তাঁকে সূরা আন – নিসা হইতে তিলাওয়াত করে শুনালাম। আমি যখন এ আয়াত পর্যন্ত পৌছলাম [অনুবাদ] : “আমি যখন প্রত্যেক উম্মাত হইতে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং তোমাকে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব, তখন কি অবস্থা হইবে?” [সূরা আন – নিসা ৪১], তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর হাত দিয়ে চাপ দেন। আমি তাহাঁর প্রতি তাকিয়ে দেখলাম, তাহাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।
সনদ সহীহ।
আবু ঈসা বলেন, আবুল আহওয়াস [রঃ]আমাশ হইতে, তিনি ইবরাহীম হইতে, তিনি আলক্বামাহ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে এই সূত্রে এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। মূলত তা হবেঃ ইবরাহীম-উবাইহাদ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২৫
আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমাকে কুরআন হইতে তিলাওয়াত করে শুনাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপরই তো কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, আর আমি আপনাকে তা তিলাওয়াত করে শুনাব! তিনি বললেনঃ অন্যের তিলাওয়াত শুনতে আমি পছন্দ করি। অতএব আমি সূরা আন – নিসা তিলাওয়াত করিতে শুরু করলাম। আমি পাঠ করিতে করিতে যখন [অনুবাদ] : “এবং আমি তোমাকে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরুপে উপস্থিত করব”, তখন নাবী [সাঃআঃ] এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাহাঁর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
সহীহ : বোখারি [৪৫৮২], মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ রিওয়ায়াতটি আবুল আহওয়াসের হাদীসের তুলনায় অনেক বেশী সহীহ। সুওয়াইদ ইবনি নাসর – ইবনিল মুবারাক হইতে, তিনি সুফইয়ান হইতে, তিনি আমাশ [রঃ]হইতে মুআবিয়াহ ইবনি হিশামের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২৬
আলী ইবনি আবী তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] আমাদের জন্য খাবারের আয়োজন করিলেন এবং আমাদেরকে দাওয়াত করে শরাব পান করান। আমাদেরকে এই শরাবের নেশায় ধরে। ইতোমধ্যে নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়। লোকজন আমাকেই ইমামতি করিতে এগিয়ে দেয়। আমি পাঠ করলাম : “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন। লা আবুদু মা তাবুদূন। ওয়া নাহনু নাবুদু মা তাবুদূন”। অর্থাৎ “ওয়ালা নাবুদু” [তোমরা যাদের ইবাদাত কর আমরা তাহাদের ইবাদাত করি না] – এর স্থলে আমি “ওয়া নাহনু নাবুদু মা তাবুদূন” [তোমরা যাদের ইবাদাত কর, আমরাও তাহাদের ইবাদাত করি] পড়ে ফেললাম। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের নিকটেও যেয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার” [সূরা আন – নিসা ৪৩]।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২৭
আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন যে, কংকরময় হাররা এলাকার একটি [পানিসেচের] নালা নিয়ে এক আনসারীর সাথে তার ঝগড়া বাধে। উক্ত নালার মাধ্যমে তারা খেজুর বাগানে পানি দিতেন। আনসারী বলিলেন, পানি আসতে নালাটি আপনি ছেড়ে দিন। যুবাইর [রাদি.] তা মানলেন না। দুজনেই বিষয়টি নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুবাইর [রাদি.] কে বললেনঃ হে যুবাইর! তোমার বাগানে পানি দিয়ে তোমার প্রতিবেশীর জন্য পানি ছেড়ে দিও। এতে আনসারী ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইনি আপনার ফুফাতো ভাই বলেই [এরূপ ফাইসালা করছেন]। এ কথায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ হে যুবাইর! তুমি তোমার বাগানের পানি প্রবাহিত করে আলগুলো পর্যন্ত পানি জমা না হওয়া পর্যন্ত নালা অন্যত্র প্রবাহিত হইতে দিবে না। যুবাইর [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয় এ ঘটনা প্রসঙ্গেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “কিন্তু না, তোমার প্রভুর শপথ! তারা ঈমানদার হইতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাহাদের পারস্পরিক মতভেদের ব্যাপারসমূহের বিচারভার তোমার উপর অর্পন না করে….” [সূরা আন –নিসা ৬৫]।
সহীহ : বোখারি [৪৫৮৫], মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, আমি মুহাম্মদ [বোখারি]- কে বলিতে শুনিয়াছি, ইবনি ওয়াহব [রঃ]এ হাদীসটি লাইস ইবনি সাদ হইতে এবং ইউনুস [রঃ]যুহরী হইতে, তিনি উরওয়া হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে, এই সূত্রে উক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। অপর দিকে শুআইব ইবনি আবী হামযাহ [রঃ]যুহরী হইতে, তিনি উরওয়াহ হইতে, তিনি যুবাইর [রাদি.] হইতে, এই সূত্রে এ হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন, কিন্তু তাতে আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] এর উল্লেখ করেননি।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২৮
যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“তোমাদের কি হল যে, মুনাফিক্বদের প্রসঙ্গে তোমরা দুই দল হয়ে গেলে…..” – [সূরা আন – নিসা ৮৮] আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীদের [মুসলিম বাহিনীর] মধ্য হইতে কিছু সংখ্যক লোক [যুদ্ধক্ষেত্র হইতে] ফিরে আসে। তাহাদের প্রসঙ্গে সাহাবীগণ দুই দলে বিভক্ত হয়ে যান। এক দলের বক্তব্য ছিল, তাহাদেরকে হত্যা কর। অন্য দলের মত ছিল, তাহাদেরকে হত্যার প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “তোমাদের কি হল যে, মুনাফিক্বদের ব্যাপারে তোমরা দুই দল হয়ে গেলে….” -[সূরা আন –নিসা ৮৮]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মাদীনা হল তাইবাহ-পবিত্র নগরী। তা ময়লা আবর্জনা [অপবিত্রতা মুনাফিক্বী] এমনভাবে দূর করে দেয় যেভাবে আগুন লোহার ময়লা দূর করে দেয়।
সহীহ : বোখারি [৪৫৮৯], মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদ হলেন একজন আনসারী আল –খাত্বমী, তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর সাহচার্য পেয়েছেন।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০২৯
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন নিহত ব্যক্তি নিজ হাতে তার হত্যাকারীকে তার কপালের চুল ও মাথা ধরে নিয়ে আসবে। তার ঘাড়ের কর্তিত রগসমূহ হইতে রক্ত বের হইতে থাকিবে। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! এ লোক আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে তার হত্যাকারীকে নিয়ে আরশের নিকট পৌছে যাবে। আমর ইবনি দীনার বলেন, লোকেরা ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর নিকট [হত্যাকারীর] তাওবার বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন [অনুবাদ] : “কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হইবে এবং আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রুষ্ট হইবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন” – [সূরা আন – নিসা ৯৩]। তিনি বলেন, এ আয়াত মানসূখও হয়নি বা তার বিধান পরিবর্তিতও হয়নি। অতএব তার আর তাওবা কিসের।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান [গারীব]। কেউ কেউ এ হাদীসটি আমর ইবনি দীনার হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তা মারফূ হিসেবে নয়।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩০
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সুলাইম বংশের এক লোক তার এক পাল ছাগল নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর এক দল সাহাবীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। সে তাহাদেরকে সালাম দিল। তারা [পরস্পর] বলল, এ লোক তোমাদের হাত হইতে বাঁচার জন্যই তোমাদেরকে সালাম দিয়েছে। এই বলে তারা উঠে গিয়ে লোকটিতে হত্যা করিল এবং তার ছাগলগুলো নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে হাযির হল। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহ তাআলার পথে [জিহাদের জন্যে] বের হইবে, তখন অবশ্যই পরীক্ষা করে নিবে এবং কেউ তোমাদের সালাম দিলে [পার্থিব জীবনের সম্পদের আকাঙ্খায়] তাকে বলবে না যে, তুমি মুমিন নও” – [সূরা আন – নিসা ৯৪]।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। উসামাহ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
হাদিস নাম্বার ৩০৩১
আল–বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে তারা সমান নয়” – [সূরা আন –নিসা ৯৫] আয়াত অবতীর্ণ হলে আম্র ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] – এর নিকট আসলেন। তিনি ছিলেন দৃষ্টিশক্তিহীন [অন্ধ]। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ রাসূল! আমি তো দৃষ্টিশক্তিহীন। আমাকে আপনি কি নির্দেশ দেন? তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “তবে যারা অক্ষম তাহাদের কথা স্বতন্ত্র” – [সূরা আন – নিসা ৯৫]। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ [আয়াতটি লিপিবদ্ধ করিতে] তোমরা আমার জন্য কাঁধের হাড় ও দোয়াত অথবা [বলিলেন] তখতি ও দোয়াত নিয়ে এসো।
সহীহ : বোখারি [৪৫৯৩-৪৫৯৪], মুসলিম, ১৬৭০ নং পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।
আমর ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] আবদুল্লাহ ইবনি উম্মি মাক্তূম বলেও কথিত। তিনি হলেন আবদুল্লাহ ইবনি যায়িদাহ্ এবং উম্মি মাকতূম তাহাঁর মা।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩২
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে” – [সূরা আন – নিসা ৯৫] আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা অক্ষম হয়েও ঘরে বসে ছিল তারা এবং যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে তারা [মর্যাদায়] এক সমান নয়। এখানে তাহাদের কথাই বলা হয়েছে। বদর যুদ্ধের নির্দেশ সম্বলিত আয়াত অবতীর্ণ হলে আবদুল্লাহ ইবনি জাহশ ও ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো উভয়েই অন্ধ! এক্ষেত্রে আমাদের দুজনের জন্য কি কোনরূপ সুযোগ আছে? তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা সমান নয় এবং যারা জিহাদ করে তাহাদেরকে আল্লাহ তাআলা মহাপুরষ্কারের ক্ষেত্রে যারা ঘরে বসে থাকে তাহাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন” – [সূরা আন –নিসা ৯৫]। যারা অক্ষম না হওয়া স্বত্বেও ঘরে বসে থাকে, এখানে তাহাদের কথা বলা হয়েছে।
সহীহ : বোখারি [৪৫৯৫]।
আবু ঈসা বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর হাদীস হিসেবে উক্ত সূত্রে এই হাদীসটি হাসান সহীহ। মিক্বসাম প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ইনি আবদুল্লাহ ইবনিল হারিসের মুক্তদাস। তিনি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর মুক্তদাস বলেও কথিত। তার উপনাম আবুল কাসিম।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩৩
সাহল ইবনি সাদ আস্ – সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মারওয়ান ইবনিল হাকামকে মাসজিদে বসা দেখে আমি তাহাঁর নিকট এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসলাম। তিনি আমাদের বলিলেন, যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] আমাকে জানিয়েছেন যে, নাবী, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার দ্বারা লেখাচ্ছিলেন : “লা ইয়াসতাবিল কাইদূনা মিনাল মুমিনীনা ওয়াল মুজাহিদূনা ফী সাবীলিল্লাহ”। তখন তাহাঁর নিকট ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি যদি জিহাদ করিতে পারতাম, তাহলে অবশ্যই জিহাদ করতাম। তিনি ছিলেন অন্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসূলের উপর ওয়াহী অবতীর্ণ করিলেন, তখন তাহাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল। তা এত ভারী লাগছিল যে, এতে আমার উরু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিছুক্ষণ পর তাহাঁর এ অবস্থা দূরীভূত হয়। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর উপর অবতীর্ণ করেন : “গাইরু উলিয যারারি”।
সহীহ : বোখারি [৪৫৯২]।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। একাধিক বর্ণনাকারী এ হাদীসটি যুহরী হইতে সাহল ইবনি সাদের বরাতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। মামার এটি বর্ণনা করিয়াছেন যুহরী হইতে, তিনি কাবীসাহ্ ইবনি যুয়াইব হইতে, তিনি যাইদ ইবনি সাবিত হইতে এই সূত্রে। তিনি আরো বলেন, এ হাদীসটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একজন সাহাবী কর্তৃক একজন তাবিঈ হইতে বর্ণিত অর্থাৎ সাহল ইবনি সাদ আস – সাঈদী আল – আনসারী [রাদি.] রিওয়ায়াত করিয়াছেন মারওয়ান ইবনিল হাকাম হইতে। মারওয়ান রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে হাদীস শুনেননি। তিনি তাবিঈদের অন্তর্ভূক্ত।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩৪
ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উমার [রাদি.] কে বললাম, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তোমরা যখন শত্রুর আশংকা করিবে তখন নামায কসর করিবে” – [সূরা আন – নিসা ১০১]। এখন তো মানুষ নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত হয়ে গেছে [এখন নামা কসর করার কি প্রয়োজন]। উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি যে বিষয়ে বিস্ময়বোধ করছ, আমিও একই বিষয়ে বিস্ময়বোধ করেছি এবং বিষয়টি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উত্থাপন করেছি। তিনি বলেছেনঃ এটা তো তোমাদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে সাদাক্বাহ্। অতএব তোমরা তাহাঁর সাদাক্বাহ্ [অনুগ্রহ] গ্রহণ কর।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [১০৬৫], মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩৫
আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুজনান ও উসফান নামক জায়গার মাঝে যাত্রাবিরতি করিলেন। মুশরিকরা বলল, তাহাদের নিকট একটি নামায আছে যা তাহাদের বাপ-দাদা ও সন্তান-সন্ততির চাইতেও বেশি প্রিয়। সেটি হচ্ছে, আসরের নামায। কাজেই তোমরা নিজেদের যাবতীয় সাজ সরঞ্জাম প্রস্তুত করে সংকল্পব্ধ হয়ে থাক এবং তাহাদের উপর [নামাযরত অবস্থায়] ঝটিকা আক্রমণ চালাও। এদিকে জিবরীল [আঃ] নাবী [সাঃআঃ] কে নির্দেশ দিলেন, আপনার সংগীদের দুভাগে বিভক্ত করুন। এক অংশকে নিয়ে আপনি নামায আদায় করুন। অন্য দল নামাযরতদের পেছনে তাহাদের ঢাল ও অস্ত্র নিয়ে সতর্কাবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকিবে। এরপর দ্বিতীয় দল [যারা নামায আদায় করেনি] আসবে। তারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে এক রাকআত নামায আদায় করিবে। তারপর তারা তাহাদের অস্ত্রশস্ত্রসহ সতর্কাবস্থায় থাকিবে। ফলে তাহাদের [উভয় দলের] এক এক রাকআত হইবে। আর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর হইবে দুই রাকআত।
সনদ সহীহ।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, আবু হুরাইরাহ্র বরাতে আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্বের হাদীস হিসেবে গারীব। আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ, যাইদ ইবনি সাবিত, ইবনি আব্বাস, জাবির, আবু আইয়্যাশ আয – যুরাকী, ইবনি উমার, হুযাইফাহ, আবু বাকরাহ ও সাহল ইবনি আবী হাসমা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু আইয়্যাশ আয –যুরাকীর নাম যাইদ ইবনি সামিত।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩৬
ক্বাতাদাহ্ ইবনিন নুমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বানূ উবাইরিক্ব নামে একটি পরিবার ছিল। ঐ পরিবারে বিশ্র, বুশাইর ও মুবাশশির নামে তিনজন লোক ছিল। বুশাইর ছিল মুনাফিক্ব। সে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গী সাথীদের কুৎসা বর্ণনামূলক কবিতা রচনা করত, তারপর অপরাপর আরবদের প্রতি সেগুলো আরোপ করে বলত, অমুকে এরূপ এরূপ কথা বলেছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীগণ যখন তা শুনতেন তখন বলিতেন, আল্লাহর শপথ! ঐ অপদার্থ [খবীস] লোকটি ব্যতীত আর কেউ এ কবিতা রচনা করেনি বা একই রকম কোন মন্তব্য করিতেন। যাই হোক তারা বলিতেন, এটা ইবনিল উবাইরক্বেই [বুশাইর] কবিতা। বর্ণনাকারী বলেন, জাহিলী ও ইসলামী উভয় যুগে এ পরিবারটি ছিল অভাবগ্রস্ত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত। মাদীনায় লোকদের প্রধান খাদ্য ছিল খেজুর ও আটা। কেউ সম্পদশালী হলে সিরিয়া হইতে কোন খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায়ী সাদা আটা বা ময়দা নিয়ে এলে সে ঐ [ব্যবসায়ী] কাফিলা হইতে ময়দা কিনে নিয়ে সঞ্চয় করে রাখত নিজের ব্যবহারের জন্য। অবশিষ্ট পরিবার-পরিজনের জন্য থাকতো খেজুর ও গম।
একবারের ঘটনা, সিরিয়া হইতে একটি খাদ্য ব্যবসায়ী কাফিলা এলো। আমার চাচা রিফাআহ্ ইবনি যাইদ [তাহাদের হইতে] এক বস্তা ময়দা কিনলেন এবং ভাঁড়ার ঘরে রেখে দিলেন। একই জায়গায় অস্ত্রশস্ত্র, বর্ম ও তলোয়ারও ছিল। এদিকে ঘরের নিচ দিয়ে তার মাল আসবাব চুরি হয়ে গেল। গোপনে সিঁদ কেটে উক্ত ঘরে রক্ষিত ময়দা ও অস্ত্রশস্ত্র লাপাত্তা হয়ে গেল। ভোরবেলা আমার চাচা রিফাআহ আমার নিকট আসলেন এবং বলিলেন, হে ভাতিজা! আমার উপর তো এরাতে যুলুম হয়ে গেল। আমার ভাঁড়ারের ঘরে সিঁদ কেটে খাবার [ময়দা] ও অস্ত্রশস্ত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মহল্লায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখলাম ও জিজ্ঞাসাবাদ করলাম। আমাদের বলা হল, আমরা আজ রাতে বানূ উবাইরিক্বদের ঘরে আলো জ্বালাতে দেখেছি। আমাদের ধারণা মতে তারা তোমাদের খাদ্যাদির তালাশেই আলো জ্বালিয়েছিল। রিফাআহ্ বলিলেন, আমরা যখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলাম তখন উবাইরিক্বের লোকেরা বলল, আল্লাহর শপথ! আমরা মনে করি তোমাদের এই চোর লাবীদ ইবনি সাহল ব্যতীত আর কেউ নয়। আমরা আগেই মহল্লাবাসীর এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। লাবীদ ছিলেন আমাদেরই মধ্যকার একজন সৎ ও ভালো মুসলিম। লাবীদ এ কথা শুনামাত্র খাপ হইতে তলোয়ার বের করে বলিলেন, আমি চুরি করি? আল্লাহর কসম! হয় আমার এ তলোয়ারের সাথে তোমার সাক্ষাত হইবে অথবা তোমরা এ চুরির সাক্ষ্য-প্রমাণ হাযির করিবে। তখন লোকেরা বলল, যাও তুমি আমাদের সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। তুমি এ কাজ করোনি। এরপরও আমরা এ ব্যাপারে মহল্লায় জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হলাম যে, বানূ উবাইরিক্বই এ কান্ড ঘটিয়েছে। অবশেষে আমার চাচা আমাকে বলিলেন, হে ভাতিজা! তুমি ঘটনার বৃত্তান্ত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট জানালে ভালো হত। ক্বাতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে তাঁকে বললাম, আমাদের মহল্লায় একটি যালিম পরিবার আছে এবং তারা আমার চাচা রিফাআহ ইবনি যাইদের ভান্ডার কক্ষে সিঁদ কেটে তাহাঁর অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্যাদি চুরি করে নিয়ে গেছে। আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন, খাদ্যদ্রব্যাদির প্রয়োজন নেই। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি শীঘ্রই এ ব্যাপারে একটিা ফাইসালা করে দিচ্ছি। বনূ উবাইরিক্ব এ কথা শুনার পর তাহাদের নিজেদের এক লোকের নিকট এলো, যার নাম ছিল উসাইর ইবনি উরওয়াহ। তারা তার সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিল। এ বাড়ির কিছু লোক একত্র হয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ক্বাতাদাহ ইবনিন নুমান ও তার চাচা আমাদের এক সৎ ও মুসলিম পরিবারের পেছনে লেগেছে এবং কোন প্রমাণ ব্যতীতই তারা তাহাদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করছে। ক্বতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে [বিষয়টি নিয়ে] তাহাঁর সাথে কথা বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি এমন এক পরিবারের বিরুদ্ধে বিনা প্রমাণে চুরির অপবাদ দিচ্ছ, যাদের সততা ও ইসলাম সম্পর্কে সুনাম আছে। ক্বাতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি ফিরে আসলাম। আমি মনে মনে বললাম, আমার এ সামান্য মাল হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আমি যদি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে এ বিষয়ে আলাপ না করতাম! এরপর আমার চাচা রিফাআহ আমার নিকট এসে বলিলেন, হে ভাতিজা! [আমার ব্যাপারে] কি করেছ? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে যা কিছু বলেছেন, আমি তাকে তা জানালাম। তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাআলাই প্রকৃত সাহায্যকারী। এরপর কিছু সময় না যেতেই কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয় [ব্যাখ্যাসহ অনুবাদ] : “নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব সত্য সহকারে তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যেন আল্লাহ তাআলা তোমাকে যা জ্ঞাত করিয়াছেন তদনুসারে লোকদের মধ্যে মীমাংসা করিতে পার। তুমি খিয়ানাতকারীদের পক্ষে [যেমন বনূ উবাইরিক্বের সমর্থনে] বিতর্ককারী হয়ো না। আর তুমি আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর [ক্বাতাদাহকে যা বলেছ তার জন্য]। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। যারা নিজেদেরকে প্রতারিত করে তুমি তাহাদের সাহায্য করো না। আল্লাহ তাআলা খিয়ানাতকারী পাপিষ্ঠদেরকে পছন্দ করেন না। এরা মানুষের হইতে লুকাতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা হইতে গোপন হইতে পারে না, কেননা তিনি তাহাদের সঙ্গেই থাকেন, যখন তারা রাতের বেলা গোপনে গোপনে তাহাঁর মর্জি বিরুদ্ধ পরামর্শ করে। এদের সমস্ত কাজই আল্লাহ তাআলা জ্ঞাত। আহা! তোমরাই এসব অপরাধীর পক্ষ সমর্থনে পার্থিব জীবনে বিতর্ক করছ, কিন্তু ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে এদের পক্ষে কে ঝগড়া করিবে অথবা কে তাহাদের উকিল হইবে? কেউ কোন পাপকর্ম করলে বা নিজের উপর যুলুম করলে তারপর আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করলে সে আল্লাহ তাআলাকে ক্ষমাকারী ও অনুগ্রহশীল পাবে [অর্থাৎ তারা আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করলে আল্লাহ তাআলা তাহাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন]। কেউ গুনাহের কাজ করলে সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে। আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। কেউ কোন সমস্যা বা পাপকর্ম করে তারপর তা কোন নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করলে [যেমন লাবীদ প্রসঙ্গে তাহাদের বক্তব্য] সে তো সাংঘাতিক মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। তোমার প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তাহাদের একটি দল তোমাকে পথভ্রষ্ট করিতে চাইত। কিন্তু তারা নিজেদের ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করিতে পারে না এবং তোমার কোন ক্ষতিও করিতে পারে না। আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমাত অবতীর্ণ করিয়াছেন এবং তোমাকে এমন জ্ঞান জানিয়ে দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। তোমার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিরাট অনুগ্রহ আছে। তাহাদের বেশির ভাগ গোপন সলা-পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই। অবশ্য কেউ কাউকে দান-খাইরাতের কিংবা কোন ভালো কাজের জন্য অথবা লোকদের মাঝে শান্তি স্থাপনের উপদেশ দিলে তাতে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে কেউ এরূপ করলে তাকে অবশ্যই আমি মহাপুরষ্কার দিব”।
[সূরা আন – নিসাঃ ১০৫-১১৪]
কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট অপহৃত অস্ত্র ফেরত আনা হল। তিনি তা রিফাআহ [রাদি.] কে ফিরিয়ে দিলেন। ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] বলেন, আমার চাচা ছিলেন বৃদ্ধ। জাহিলিয়াতের যুগে তার রাতকানা রোগ হয়েছিল, অথবা বলেছেন, জাহিলিয়াতের আমলেই বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন [আবু ঈসার সন্দেহ]। আমার ধারণা ছিল যে, তিনি ইসলামে দাখিল ছিলেন। আমি তার নিকট অস্ত্র ফেরত নিয়ে আসলে তিনি বলিলেন, হে ভাতিজা! এটা আমি আল্লাহ তাআলার রাস্তায় দান করে দিলাম। এবার আমার প্রত্যয় জন্মালো যে, নিঃসন্দেহে তিনি একজন খাঁটি মুসলিম। কুরআনের উক্ত আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হওয়ার পর বুশাইর মুশরিকদের সাথে গিয়ে মিলিত হয় এবং সাদ ইবনি সুমাইয়্যার কন্যা সুলাফার নিকট অবস্থান গ্রহণ করে। তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথের অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় আমরা সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাহাঁর সাথে শারীক করাকে ক্ষমা করেন না, তা ব্যতীত সবকিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং কেউ আল্লাহ তাআলার সাথে শারীক করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়”- [সূরা আন – নিসা ১১৫-১১৬]।
বুশাইর যখন সুলাফার নিকট আশ্রয় নিল, তখন হাসসান ইবনি সাবিত [রাদি.] কিছু কবিতার চরণ দ্বারা সুলাফার নিন্দাবাদ করেন। এতে সুলাফা বুশাইরের মালপত্র নিজ মাথায় তুলে নিয়ে তা আবতাহ নামক স্থানে গিয়ে ফেলে দিল। সে আরো বলল, তুমি আমার জন্য হাসসানের [নিন্দাসূচক] কবিতা উপহার নিয়ে এলে, আমার জন্য উত্তম কিছু নিয়ে আসতে পারলে না।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। মুহাম্মদ ইবনি সালামাহ্ আল – হাররানী ব্যতীত আর কেউ এটিকে মুসনাদরূপে রিওয়ায়াত করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনি ইসহাক্ব – আসিম ইবনি উমার ইবনি ক্বাতাদাহ সূত্রে ইউনুস ইবনি বুকাইর প্রমুখ মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে “তাহাঁর বাবা-তার দাদা” সূত্রের উল্লেখ নেই। ক্বাতাদাহ ইবনিন নুমান মাতার দিক হইতে আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] এর ভাই। আবু সাঈদ [রাদি.] এর নাম সাদ ইবনি মালিক ইবনি সিনান।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩৭
আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ আমার কাছে কুরআনের এ আয়াত হইতে পছন্দনীয় আয়াত আর কোনটি নেইঃ “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাহাঁর সাথে অংশীদার করাকে মাফ করেন না; তা ছাড়া সব কিছু যাকে ইচ্ছা মাফ করেন”।
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু ফাখিতার নাম সাঈদ ইবনি ইলাকা। সুআইরের উপনাম আবু জাহম। ইনি কূফার বাসিন্দা তাবেঈ। তিনি ইবনি উমার [রাদি.], ইবনি যুবাইর [রাদি.] হইতে হাদীস শুনেছেন। ইবনি মাহদী তাকে কিছুটা দোষারোপ করিতেন।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৩৮
আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে পাবে”- [সূরা আন – নিসা ১২৩] আয়াত অবতীর্ণ হলে মুসলিমদের নিকট বিষয়টি খুবই গুরুতর মনে হয়। তাই তারা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। তিনি বললেনঃ তোমরা সত্যের নিকটবর্তী থাক এবং সরল সোজা পথ তালাশ কর। মুমিনের প্রতিটি বিপদ-মুসীবত ও কষ্ট-ক্লেশ, এমনকি তার দেহে কোন কাঁটা বিদ্ধ হলে বা তার উপর কোন আকস্মিক বিপদ এলে তার দ্বারাও তার গুনাহ্র কাফ্ফারা [ক্ষতিপূরণ] হয়ে যায়।
ইবনি মুহাইসিনের নাম আম্র ইবনি আবদুর রাহমান ইবনি মুহাইসিন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৩৯
আবু বাক্র সিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে হাজির থাকাবস্থায় তাহাঁর উপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “যে কেউ খারাপ কাজ করিবে সে তার প্রতিফল পাবেই এবং সে নিজের জন্য আল্লাহ্ তাআলা ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না” [সূরাঃ আন-নিসা- ১২৩]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আবু বাক্র! আমি কি আপনাকে ঐ আয়াত পাঠ করে শুনাব না যা আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! অবশ্যই। তিনি আমাকে আয়াতটি পাঠ করে শুনান। আমি আর কিছুই জানি না, তবে তখন আমার মনে হল যে, আমার শিরদাঁড়া ভেঙ্গে গেছে। তাই আমি পিঠমোড় দিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলেনঃ হে আবু বাক্র! আপনার কি হল? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনার প্রতি আমার পিতামাতা উৎসর্গীত হোক। আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে খারাপ কাজ করে না? আমাদের প্রতিটি কাজের জন্যই কি প্রতিফল ভোগ করিতে হইবে? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আবু বাক্র! আপনি এবং মুমিনগণ এ দুনিয়াতেই তার প্রতিফল পেয়ে যাবেন। অবশেষে আপনারা আল্লাহ্ তাআলা এর সাথে পাপমুক্ত অবস্থায় মিলিত হইবেন। পক্ষান্তরে অপরাপর লোকদের খারাপ কাজগুলো তাহাদের জন্য সঞ্চিত করে রাখা হইবে। অবশেষে হাশরের দিন তাহাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হইবে।
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। এটির সনদসূত্র সমালোচিত। এ হাদীসের রাবী মূসা ইবনি উবাইদা হাদীসশাস্ত্রে দুর্বল। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ ও আহমাদ ইবনি হাম্বল [রাদি.] তাকে জঈফ বলেছেন। ইবনি সিবার মুক্তগোলাম অখ্যাত ও অজ্ঞাত। হাদীসটি ভিন্নরূপে আবু বাক্র [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে, এর সনদও সহীহ নয়। এ অনুচ্ছেদে আইশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৪০
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সাওদা [রাদি.] এর আশংকা হল যে, নাবী [সাঃআঃ] তাকে তালাক দিবেন। তাই তিনি বলিলেন, আপনি আমাকে তালাক না দিয়ে আপনার বিবাহবন্ধনে স্থির রাখুন। আমার জন্য নির্দ্ধারিত দিনটি আপনি আয়িশাহ্র নিকটই থাকুন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাই করিলেন। এ প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয় : তবে তারা [স্বামী-স্ত্রী] আপোষ-নিষ্পত্তি করিতে চাইলে তাহাদের কোন গুনাহ নেই এবং আপোষ-নিষ্পত্তিই শ্রেয়” – [সূরা আন – নিসা ১২৮]। যে বিষয়ের উপর তারা আপোষ করিবে তা জায়িয। শেষের বক্তব্যটুকু ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর।
সহীহ : ইরওয়াহ [২০২৫]।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৪১
আল – বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে] সবশেষে যে আয়াত অবতীর্ণ হয় তা হল : “লোকেরা তোমার নিকট বিধান জানতে চায়। বল, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে বিধান দিচ্ছেন…..” [সূরা আন – নিসা ১৭৬]।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২৫৭০], বোখারি [৪৬০৫], মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আবুস সাফারের নাম সাঈদ ইবনি আহমাদ আস্ –সাওরী। তিনি ইবনি ইউহ্মিদ আস – সাওরী বলেও কথিত।
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
হাদিস নাম্বার ৩০৪২
আল বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! “লোকেরা আপনার নিকট বিধান জানতে চায়। বলুন, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা তোমাদের বিধান দিচ্ছেন……” – [সূরা আন্ –নিসা ১৭৬]। নাবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তোমার জন্য এ ব্যাপারে গ্রীষ্মকালীন ঐ আয়াতটিই [সূরা আন্ – নিসা ১৭৬] যথেষ্ট।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২৫৭১], মুসলিম উমার [রাদি.] হইতে।
ইমাম বাগাবী বলেন, এ আয়াত [সূরা আন্ – নিসা ১৭৬] , বিদায় হাজ্জের সময় গ্রীষ্মকালে অবতীর্ণ হয়, তাই একে গ্রীষ্মকালীন আয়াত বলা হয়। [অনুবাদক]
সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস