বাইবেল কুরআন ও বিবর্তনবাদ | কুরআন ও বিবর্তনবাদ | বাইবেল ও বিবর্তনবাদ
বাইবেল কুরআন ও বিবর্তনবাদ
সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই বিবর্তন আর ইসলামিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে আলোচনা করছেন।তাদের কথা হলো কুরআন, বাইবেলের মতো সরাসরি সকল প্রাণের সৃষ্টির কথা বলে না।মানুষকে এককভাবে সৃষ্টি করা হলেও অন্যান্য প্রাণীর বিবর্তন হওয়াকে কুরআন অস্বীকার করে না।অর্থাৎ বিবর্তন যদি সত্য প্রমাণিতও হয় তাহলেও কোন সমস্যা নেই।………………….
প্রথমেই বাইবেল নিয়ে আলোচনায় আসা যাক।বাইবেলের আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে বাইবেল মতে একদিনে গাছপালা,একদিনে সামুদ্রিক, একদিনে স্থলজ প্রাণ এভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে।অর্থাৎ সবই আলাদা ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
বাইবেলের কিছু বর্ণনা দেখি,
(i)”Then God said, “Let the earth produce vegetation: seed-bearing plants and fruit trees on the earth bearing fruit with seed in it according to their kinds.” And it was so.”
[Genesis 1:11,Holman Christian Standard Bible]
অর্থ্যাৎ সবগুলো গাছ আলাদা আলাদা ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।এবার প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখুন—
(ii)”So God created the large sea-creatures and every living creature that moves and swarms in the water, according to their kinds. He also created every winged bird according to its kind. And God saw that it was good.”
[Genesis 1:21,Holman Christian Standard Bible]
এই বর্ণনা গুলো একদম স্পষ্ট ভাবেই বিবর্তন বিরোধী।এবার আসি কুরআনের বর্ণনায়।এটা সত্যি যে, কুরআনে এইসব সৃষ্টির ব্যাপারে স্পষ্ট কোন আয়াত নেই।অর্থাৎ প্রাণ সৃষ্টি আলাদা আলাদা ভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা এটা বর্ণিত হয় নি।আর এখান থেকেই এই আলোচনার শুরু।
এছাড়া অনেকেই আবার কুরআনের আয়াত দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন।যেমন:
جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ
আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।[আম্বিয়া-২১:৩০]
এই আয়াতকে উপস্থাপন করে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে,যেহেতু সবকিছুই পানি থেকে সৃষ্ট তাই এটা বিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে সমস্যা নেই।
ভালো কথা,আমি আরেকটি আয়াত উপস্থাপন করছি।
سُبۡحٰنَ الَّذِیۡ خَلَقَ الۡاَزۡوَاجَ کُلَّهَا مِمَّا تُنۡۢبِتُ الۡاَرۡضُ وَ مِنۡ اَنۡفُسِهِمۡ وَ مِمَّا لَا یَعۡلَمُوۡنَ
পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সকল জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যমীন যা উৎপন্ন করেছে তা থেকে, মানুষের নিজদের মধ্য থেকে এবং সে সব কিছু থেকেও যা তারা জানে না [যারিয়াত-৫১:৪৯]
প্রথম আয়াতে (২১:৩০) খেয়াল করলে দেখবেন যে সেখানে সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে পানি থেকে।বিষয়টি খেয়াল করুন সব কিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে,বের করা বা আনয়ন করা বা উৎপন্ন করা হয়েছে এমন বলা হয় নি।(খলাক্ব বলা হয়েছে,ওখরিজু বা এধরণের শব্দ নয়)
পরের আয়াতেও(৫১:৪৯) সৃষ্টির কথাই বলা হয়েছে,আরো স্পষ্টভাবে খেয়াল করুন যমীন থেকে যা বের হয়(গাছ) তার সব সৃষ্টি করেছেন(জোড়ায়-জোড়ায়)।
তাই বিবর্তনের সাথে সাংঘর্ষিকই মনে হয় এইগুলো।
এবার বিবর্তন নিয়ে আলোচনায় আসা যাক:
আমার জানা মতে পৃথিবীতে এর চেয়ে বিতর্কিত বিজ্ঞান বিষয়ক কোন আলোচনা আর নেই।এর পক্ষে-বিপক্ষে মতের শেষ নাই।ডারউইনের সহযোদ্ধা হাক্সলে (Huxley) সারাজীবন বিবর্তনের প্রমাণে বই-লেখা থেকে শুরু করে সব করেছেন।এই হাক্সলে শেষজীবনে বিবর্তনের বিপক্ষে মত দিয়ে গেছে!শেষ জীবনে হাক্সলে বিবর্তনের প্রতি তীব্র ঘৃণা পোষণ করতেন।[Modern Science and the Nature of Life, P. 144]
১৯৫০ সালের দিকের ঘটনা দেখুন,
“Biologists are now not only in virtually unanimous agreement that all life derives from preceding life, but that the parent organism and its offspring are of the same kind.”
[Encyclopaedia Americana -vol 3. p. 721]
অর্থ্যাৎ,
“বর্তমান জীববিজ্ঞানীগণ কেবল নীতিগত দিক থেকে নয় বরং সামগ্রীক ভাবেই এব্যাপারে ঐক্যমতে পৌছেছেন যে,সমস্ত জীবন পূর্ববর্তী জীবন থেকেই এসেছে।এবং তাদের বংশধররাও একই প্রজাতির।”
B. B. Vance এবং D. F. Miller তাদের লিখিত বইয়ে উল্লেখ করেছেন,
” All of the forms of plants and animals that we have studied in biology produce their young from their own bodies and in no other way.”
[Biology for You -(1964) p. 468]
অর্থ্যাৎ,
“আমরা জীববিজ্ঞানে যতো ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে পড়েছি তাদের সবগুলোই নিজেদের দেহ থেকেই সন্তান উৎপাদন করে, অন্য কোন উপায়ে নয়।”
এইগুলা সব প্রাচীন কথাবার্তা। বয়স ৫০ এর বেশি।নতুন কথাবার্তা দেখি একটা—
Professor Dr. Marcos Nogueira Eberlin হলেন একজন ব্রাজিলিয়ান কেমিস্ট।তিনি “Brazilian Academy of Sciences” এর একজন সদস্য।বিজ্ঞানে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে “Brazilian National Order of Scientific Merit ” পুরষ্কার লাভ করেন।এছাড়া ২০১৬ সালে তিনি “Thomson Medal” লাভ করেন।
তিনি বলেছেন,
“As a (bio)chemist I become most skeptical about Darwinism when I was confronted with the extreme intricacy of the genetic code and its many most intelligent strategies to code, decode and protect its information, such as the U x T and ribose x deoxyribose exchanges for the DNA/RNA pair and the translation of its 4-base language to the 20AA language of life that absolutely relies on a diversity of exquisite molecular machines made by the products of such translation forming a chicken-and-egg dilemma that evolution has no chance at all to answer.”
ডিএনএ কোডিং এর জটিলতা এবং এর উপর ভিত্তিকরেই বিবর্তন একটা সন্দেহযুক্ত ধারণা তার কাছে।কেননা উক্ত বিষয় সমূহে বিবর্তনবাদীদের উত্তর দেওয়ার কোন সক্ষমতা নেই।এর এসব কারণেই তিনি বিবর্তনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
“A Scientific Dissent From Darwinism” এ বিজ্ঞানীরা নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন যেখানে বিজ্ঞানীদের সংখ্যা ১০০০ এর উপরে।১০ মিনিট সময় ব্যায় করে নিচের pdf ফাইলটিতে একবার ঘুরে আসুন।কারা কারা এইখানে আছেন সেটা বুঝতে সক্ষম হবেন।
(i) https://www.discovery.org/f/660 [Direct Pdf Link]
এখান অনেকেই বলতে পারেন যে বিপক্ষে যেমন বিজ্ঞানী আছে পক্ষে তো তার চেয়েও বেশি আছে!উত্তর হলো হ্যা আছে।আর এজন্যই এটা বিতর্কিত এবং অমীমাংসিত একটা বিষয়।তাই এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলছি।একদল তো জীববিজ্ঞানের ভেতর বিবর্তন ছাড়া কিছুই চোখে দেখে।মনে হয় মেডিকেল সাইন্স বিলীন হয়ে গেছে।আরেকদলের কাছে এই বিতর্কিত বিষয় টা বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় প্রমাণিত সত্য! Oh really?
ব্যাপারটা এমন যে, “গায়ে মানে না আপনি মোড়ল”
আবার অনেকেই বলতে পারেন যে,যারা পক্ষে মত দিয়েছেন তারা হয়তো রিলিজিয়াস, ক্রিয়েশনিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।এদের জন্য বলছি,নিজেরাই ধর্ম আর বিজ্ঞানকে একসাথে জাজ করতে নিষেধ করেন আবার এখানে বিজ্ঞানীদের ধর্ম টানছেন?তারা ধর্মীয় হোক বা না হোক ক্রিয়েশনিস্ট হোক বা না হোক তাতে বিষয়ের কিছু আসে যায় না।
জিনতত্ত্বের(Genetics) জনক গ্রগর জোহান মেন্ডেল চার্চের শিক্ষানবিশ ছিলেন,ডারউইন নিজেও ক্রিয়েশনিস্ট ছিলেন(তার মতে প্রথম প্রাণ স্রষ্টা হতে আসা)।এছাড়া বিবর্তনের যে কমন এনসেস্টরের ও বিবর্তন ট্রির ধারণা সেটা স্পষ্টতই নেওয়া হয়েছে ক্যারোলাস লিনিয়াসের ট্যাক্সোনোমি থেকে।অপরদিকে লিনিয়াস সেই কাজ করেছিলেন স্রষ্টার মহিমা বর্ণনার জন্য!
(i) https://www.ucmp.berkeley.edu/history/linnaeus.html
বিষয় টা আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা কথা দ্বারা শেষ করছি—
“Science without religion is lame and Religion without science is blind.”
[Albert Einstein, Religion and Science, New York Times Magazine, November 9, 1930, pp 1-4]
এখন কিছু কথা বলে শেষ করে দিচ্ছি—
প্রথম কথা হলো বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল।আর এটাই বিজ্ঞানের সৌন্দর্য।আজকে একটা তথ্য বিজ্ঞান দিচ্ছে কাল সেটার উল্টো বলবে না এটার গ্যারান্টি বিজ্ঞান দেয় নি।আপনিও হয়তো নিউটনের সূত্র ভুল প্রমাণ করতে পারেন।আসলে এটাই বিজ্ঞান।চূড়ান্ত বলতে বিজ্ঞানে কিছু নেই।
তার উপর জন্মের পর থেকেই বিবর্তন প্রশ্নবিদ্ধ।বিতর্কিত এই টপিক নিয়ে এতো কানাঘুষা করার কোন মানে নেই।এছাড়া আরো কিছু কথা আছে, বিবর্তনবাদীরা কালে কালে কিছু ঐতিহাসিক মিথ্যাচার আর মিথ্যা নাটক করেছে।অনেক ভুয়া ফসিল দিয়ে নিজেদের মতকে শক্তি শালী করতে চেয়েছে।অঙ্গের নিষ্ক্রিয়তা,জাঙ্ক ডিএনএ সহ অনেক কিছু নিয়েও গুজামিল দেওয়ার চেষ্টা করেছে।বিবর্তনের বিপক্ষে করা অনেক একাডেমিক কাজকে এড়িয়ে গেছে।তাই এ বিতর্কিত বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়ানোই বোকামি মনে করি।কুর’আনকেও বিবর্তনের সাথে মেলানো নিষ্প্রয়োজন।
Tag:বাইবেল কুরআন ও বিবর্তনবাদ,কুরআন ও বিবর্তনবাদ, বাইবেল ও বিবর্তনবাদ