Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

পৃথিবীর মানচিত্র। prithibir manchitra Free 2025

 পৃথিবীর  মানচিত্র ~ prithibir manchitra

পৃথিবীর মানচিত্র। prithibir manchitra Free 2025: আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন সবাই,  আশা করি সবাই ভালো আছেন।  আমদের এই পৃথিবী অনেক বড়,  কোথাও বরফ, কোথাও মেরু, কোথাও উচু আবার কথাও নিচু।

আজকে আমরা পৃথিবীর মানচিত্র,মহাবিশ্বের স্বর্গীয় মানচিত্র,ইউরোপ এশিয়ার ব্ল্যাক অক্টোপাস মানচিত্র এর পুরো ইতিহাস তুলে ধরবো। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।

ইতিহাসে বেশির ভাগ মানচিত্রই সুন্দর এবং সঠিক নির্দেশনার জন্য আঁকা হয়েছিল। এসব মানচিত্র আঁকা ছিল যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি মূল্যবান। এমন কিছু মূল্যবান মানচিত্রের খবর জানাচ্ছেন— আবদুল কাদের

লিও বেলজিকাস মানচিত্র 

অদ্ভুত লিও বেলজিকাস শব্দটি বেলজি শব্দ থেকে আসে। যা এখনকার বেলজিয়ামকে বোঝানো হয়। অস্ট্রিয়ান চিত্রশিল্পী মাইকেল অ্যাতজিঞ্জার ১৫৮৩ সালে অদ্ভুত সুন্দর শিল্পটি করেন। নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ ও বেলজিয়াম রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। মানচিত্রটি তৈরির পেছনে রয়েছে বহু বছরের যুদ্ধের ইতিহাস।

নেদারল্যান্ডস তখন স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ আশি বছর যুদ্ধ করে। নেদারল্যান্ডসের সৈন্যদল ব্রেব্যান্ট, ফ্লান্ডার্স, ফ্রিসিয়া, হল্যান্ড, লিমবার্গ, গুয়েল্ডার্স, লুক্সেমবার্গ এবং জিল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল। সবগুলোই উইলিয়াম অরেঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। অদ্ভুত সুন্দর এই মানচিত্রটি দেখতে অনেকটা সিংহের মতো। এই প্রতিকৃতিতে অনুপ্রেরণার কারণও ছিল।

তখন সিংহের আকৃতিকে আভিজাত্যের প্রতীক বলে মনে করা হতো। মাইকেল অ্যাতজিঞ্জার মানচিত্রটির নাম দেন লিও বেলজিকাস। এর পর থেকে চিত্রশিল্পে নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়। ১৬০৯ সালে দীর্ঘ বারো বছরের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর পরই বিখ্যাত এই মানচিত্রটি প্রথম প্রকাশিত হয়। অদ্ভুত মানচিত্রটি প্রকাশ করেন ক্লেস জ্যানসজুন বিসচের। প্রকাশক বিসচেরের জন্য এটিই ছিল সবচেয়ে বড় সংস্করণ। ১৯৪৮ সালে নেদারল্যান্ডস স্বাধীনের পর বিসচেরের হাত ধরেই মানচিত্রটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।

Read More: বাংলাদেশের মানচিত্র। Bangladesher Manchitro

বুক অব নেভিগেশন মানচিত্র

অটোমান নৌ সেনাপতি পিরি রেইস বেশ কিছু চমৎকার মানচিত্র ডিজাইন করেন। অটোমান এই সেনাপতির অসংখ্য শিল্পকর্ম তার নিজের লেখা বই ‘দ্য বুক অব নেভিগেশন’-এ সংরক্ষিত ছিল। বইটি ১৫২১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। যদিও প্রকাশনার বছর নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। সেনাপতি পিরি রেইস অটোমান সুলতান সুলেমানকে বইটি উৎসর্গ করেন।

বিখ্যাত বইটিতে অটোমান সময়কার দ্বীপ, পাহাড়-পর্বত, সাগর-উপসাগরগুলো সূক্ষ্ম ও নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। তবে, যেসব স্থান তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি, সেসব স্থান তিনি উপেক্ষা করেন। ১৫১৩ সালে রেইসের প্রথম মানচিত্র প্রকাশিত হয়। মানচিত্রটিতে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাও সংযুক্ত ছিল।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, মানচিত্রটিতে দেখানো দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশ ও অ্যান্টার্কটিকার উপকূল অংশ বর্তমান মানচিত্রের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। রেইসের বিখ্যাত মানচিত্রটি অটোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক দলিল। তার ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান ছিল অসাধারণ। রেইস মূলত এই বিজ্ঞ ধারণাকে কাজে লাগিয়েই মানচিত্রটির নকশা করেন।

কেডিড এটলাস তারকুমেসি মানচিত্র 

‘কেডিড এটলাস তারকুমেসি’ মুসলিম বিশ্বের প্রথম প্রকাশিত মানচিত্র। এটি  অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান সেলিম-৩ এর সময়কার মানচিত্র। ১৮০৩ সালে মানচিত্রটি প্রথম প্রকাশিত হয় তুরস্কের রাজধানী ইস্তান্বুলে। এরপর মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। শিল্পকর্মটি ইউরোপিয়ান আদলে তৈরি করা হয়।

এর আয়তন ৩৬ সে.মি দৈর্ঘ্য ও ৩৬ সে.মি. প্রস্থ। সুলতান সেলিম মাত্র ৫০ কপি মানচিত্র ছাপানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন। ছাপা শেষে প্রথম কপিটি সুলতানের হাতে দেওয়া হয়। আর বাকি কপিগুলো রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হয়। কিছু কপি ছিল রাজ্যের গুদামঘরে।

দুর্ভাগ্যবশত গুদামঘরের মানচিত্রগুলো আগুনে পুড়ে যায়। তুরস্কের সৈন্যদের বিদ্রোহের আগুনে ধ্বংস হয় সুলতান সেলিমের বহু সংস্কারকৃত সাম্রাজ্য। সেই বিদ্রোহের আগুনেই বিলীন হয়ে যায় ইতিহাসের মহামূল্যবান মানচিত্রটি। এটি প্রাচীন ও বিরল ছাপা মানচিত্রগুলোর একটি। এর লেখা অক্ষরগুলো বেশ গোছানো। মানচিত্রটি টেকসই এবং এতে কাগজের পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করা হয়।

ইউরোপ এশিয়ার ব্ল্যাক অক্টোপাস মানচিত্র

১৯০৪ সালের মার্চ, রাশিয়া ও জাপানের যুদ্ধের ঠিক আগ মুহূর্ত, গোটা বিশ্ব নড়েচড়ে বসে একটি চিত্র দেখে। এটি কোনো শিল্পকর্ম ছিল না, ছিল রম্যরসে ভরা ব্যঙ্গাত্মক মানচিত্র। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্ল্যাক অক্টোপাস’। আলোচিত মানচিত্রটি অঙ্কন করেন কিসাবার ওহারা। এটি ছিল সে সময়ের অদ্ভুত কূটনৈতিক মানচিত্র।

‘ব্ল্যাক অক্টোপাস’ নামটি দেন বিশিষ্ট এক ইংরেজ। প্রকাশিত মানচিত্রটি রাশিয়াকে ব্ল্যাক অক্টোপাসের রূপে দেখানো হয়। অক্টোপাসের হাতিয়ার স্বরূপ আটটি বাহু দেখানো হয়। মানচিত্রটিতে দেখানো হয়েছে, অক্টোপাসটি এশিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশকে ধরার চেষ্টা করছে।

ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড, ক্রিমিয়া ও বলকানের মতো দেশগুলো ইতিমধ্যে অক্টোপাসের আঘাতে আহত এবং তুরস্ক, পারস্য ও তিব্বতকে পুরো শক্তি দিয়ে বন্দীর চেষ্টা করছে। এখানে দেশের প্রতীক হিসেবে জীবন্ত মানুষকে চিত্রিত করা হয়। অক্টোপাসের অস্ত্র কোরিয়া ও পোর্ট আর্থারের দিকে তাক করানো ছিল।

এখানে অক্টোপাসকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন, রাশিয়া পুরো এশিয়ায় আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করছে। এটাই প্রথম ব্যঙ্গাত্মক মানচিত্র যেখানে ইউরোপও নিরাপদ নয়। মানচিত্রটিতে কোনো লেখা ছাড়াই বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব পরিস্থিতি। রাশিয়া এখানে ভয়ঙ্কর প্রাণী, যেখানে অন্য দেশ ছিল ঝুঁকিতে।

world map পৃথিবীর মানচিত্র পৃথিবীর মানচিত্র,prithibir manchitra,ইউরোপ এশিয়ার ব্ল্যাক অক্টোপাস মানচিত্র,সমরকন্দের চমৎকার মানচিত্র,মহাবিশ্বের স্বর্গীয় মানচিত্র,কোরিয়ার চিয়োনহাদো

সর্দারের পরিকল্পনায় নিউইয়র্ক

১৬৬৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যরা নিউ ইয়র্ক দখল করে। তখন নিউ ইয়র্ক শহরটি ডাচদের অধীনে ছিল। ১৬২০ সালে ডাচরা এখানে জীবনযাপন শুরু করে। উপরের মানচিত্রটিতে সেই সময়কার দৃশ্যাবলীই ফুটে উঠেছে। যেখানে রয়েছে হাডসন নদী, বিশাল দ্বীপ এবং প্রাচীন মান্নাদোস শহর।

মানচিত্রটিকে সবাই জেমস ডিউক অব ইয়র্কের মানচিত্র বলেই চিনেন। ডিউক ছিলেন ডাচ কলোনির সর্দার। তার আরেকটি পরিচয়, তিনি ডাচ রাজা চার্লস ২-এর ভাই। পরবর্তীকালে তিনি জেমস-২ নামে পরিচিতি পান। ডিউকের ইচ্ছে ছিল তার নামে শহরটির নামকরণ করবে। প্রত্যাশার ষোলআনাই পূর্ণ হয়, পরবর্তীতে তার সম্মানে নিউ ইয়র্ক নামকরণ করা হয়।

এটি নিউ ইয়র্কের জন্মের সনদও বলা হয়। মানচিত্রটির নকশা অনেকটা পুরনো ডাচ কলোনির মতো। আলঙ্কারিক সীমানা, প্রচুর খালি জমি এবং অথৈ পানি সব মিলিয়ে মানচিত্রটি যেন শিল্পীর নিখুঁত শিল্পকর্ম। মানচিত্রের জাহাজগুলো শক্তিশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নির্দেশনা দেয়।

সমরকন্দের চমৎকার মানচিত্র

যিশুর জন্মের প্রায় আগের কথা। মহাবীর ‘ইস্কান্দার’ আলেকজান্ডার একটি শহর জয় করেন। সময়টা ছিল ৩২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। শহরটি গ্রিকদের কাছে মারাকান্দা নামেই পরিচিত ছিল। এর আগে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সালে শহরটি প্রাচীন পারস্যের সদগিয়ানার রাজধানী বলেই চিনত সবাই। শহরটি বর্তমানে উজবেকিস্তানের একটি প্রদেশ।

এটি উজবেকিস্তানের সমরকন্দ প্রদেশের মরুভূমি রাজধানী। সমরকন্দ শব্দটি প্রাচীন ফার্সির আসমারা শব্দ, যার অর্থ পাথর বা পাষাণ এবং সোজিয়ান ভাষার কন্দ থেকে, যার অর্থ কেল্লা বা শহর। চীন থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত এই শহরটির অবস্থান। জেরফশন নদীর পাশেই শহরটি অবস্থিত। সেই সময়ের শহরটির মূল মানচিত্রটি পাওয়া যায়নি।

কিন্তু বিখ্যাত মানচিত্র বিশারদ রবার্ট এলবেতার ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটরের সাহায্যে মানচিত্রটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। মানচিত্রটির আক্ষরিক স্টাইল অনেকটা আরবি ভাষার মতো। এর নকশার বৃত্ত অধিক্রমণ সেলুলার স্ট্রাকচার ফটোগ্রাফের মতো দেখায়। রবার্ট আলবেতার একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার।

মহাবিশ্বের স্বর্গীয় মানচিত্র

দ্য প্লানিস্পেয়ার অব অ্যারাটাস কিংবা মহাবিশ্বের গঠনমূলক স্বর্গীয় কক্ষপথ। এটি মূলত কাল্পনিক স্বর্গীয় কক্ষপথের মানচিত্র যা ডিজাইন করেছিলেন আন্দ্রিয়াস ক্যালিরিয়াস। আন্দ্রিয়াসকে খুব কম মানুষই চেনেন। তার আঁকা স্বর্গীয় মহাবিশ্বের মানচিত্রটি অনুমানকৃত মহাকাশের কক্ষপথের মানচিত্র। এটি প্রকাশিত হয় ১৬৬০ সালে।

এটি তার প্রকাশিত মানচিত্র নির্মাণ বিদ্যার বই ‘হারমোনিয়া ম্যাকরোকোসমিকা’-এর খণ্ডকালীন অংশ। জ্যোতির্বিদ্যার পাণ্ডুলিপিতে গ্রিক জ্যোতির্বিদ ও কবি অ্যারাটাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মহাবিশ্বের কক্ষপথের মানচিত্র আঁকা হয়েছিল। এটি অবিকল মহাবিশ্বের আদলে আঁকা স্বর্গীয় মহাকাশ। মানচিত্রে পৃথিবীকে কক্ষপথের মাঝের অবস্থানে দেখানো হয়েছে।

এখানে মহাবিশ্বের আদলে সূর্য, চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রও পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে ও জ্যোতির্বিদ্যার দেওয়া নানা চিহ্নের কাছাকাছি অবস্থান করছে। কক্ষপথগুলো স্বাভাবিক মাধুর্যপূর্ণ এবং সব কিছুই একেবারে পরিষ্কার ও যথাযথ স্থানে রয়েছে। পৃথিবীর সব মানচিত্রের চেয়ে হারমোনিয়া অসম্ভব সুন্দর মানচিত্র। এটি কাল্পনিক জগতের মহাসম্মিলন। হারমোনিয়া পাণ্ডুলিপিতে আন্দ্রিয়াস ক্যালিরিয়াসের আরও অসামান্য শিল্পকর্ম রয়েছে। পাণ্ডুলিপিটিতে জ্যোতির্বিদ্যার আরও অসংখ্য মানচিত্র রয়েছে।

কোরিয়ার চিয়োনহাদো  / পৃথিবীর মানচিত্র

১৮০০ সালের কোরিয়ার একটি শহরের মানচিত্র চিয়োনহাদো। কোরিয়ান শব্দ থেকেই চিয়োনহাদোর উত্পত্তি। শব্দটির বাংলা আক্ষরিক অর্থ ‘স্বর্গের অধীনে সম্পূর্ণ মানচিত্র’। সেই থেকে আজ পর্যন্ত শহরটি চিয়োনহাদো নামেই পরিচিত। ধারণা করা হয়, ১৭ শতকের কোনো এক সময় কোরিয়া অদ্ভুত এই মানচিত্রটি প্রকাশ করে।

এর একেবারে কেন্দ্রে রহস্যময় মেরু পর্বতের মতো দেখতে। কোরিয়ান বৌদ্ধ, জৈন এবং হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করে, এই মেরু পর্বত শুধু প্রাকৃতিক গোলার্ধই নয়, এটি মহাবিশ্বের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। কয়েকজন পণ্ডিতের দাবি, এটি বিশ্ব মানচিত্রের আধুনিকায়নের অনুপ্রেরণা স্বরূপ।

কোরিয়ানরা মানচিত্রটি নিয়ে যতটা আগ্রহী, বিশ্বের অন্য কোনো দেশের মানুষ তাদের দেশের আপেক্ষিক আয়তনের মানচিত্র এতটা আগ্রহী নন। মানচিত্রটির ভৌগোলিক অবস্থান চীন ও মেরু পর্বতের সীমানা ঘেঁষা চিয়োনহাদো অঞ্চল। তবে মানচিত্রে শুধু কোরিয়াকেই দেখানো হয়েছে চীন কিংবা জাপানকে নয়। ১৯ শতাব্দীতে চিয়োনহাদো মানচিত্র কোরিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

Leave a comment