২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য Free 2024 | ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য | একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য
২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভিজিটর আপনারা যারা আজকে ২১ শে ফেব্রুয়ারির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য যারা খুঁজছেন
২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য
২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য যাদের লাগবে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে নি। এই বক্তব্যটি আশা করি আপনাদের অনেক পছন্দ হবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য
একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য নিয়ে এসেছি আপনাদের জন্য। ছাত্র ছাত্রী অথবা শিক্ষকবৃন্দ যাদের একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য প্রয়োজন তারা এই পোস্ট থেকে সংগ্রহ করে নিন।
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় উপস্থিত ভাই ও বোনেরা। আমার বক্তব্যের শুরুতে আপনাদেরকে জানাই শুভেচ্ছা। এবং আজকের এই দিনে স্মরণ করছি ভাষা শহীদদেরকে যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। এবং স্মরণ করছি এই সোনার বাংলার প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন মূলত একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হলেও সেটা ছিল বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক আন্দোলনের উৎস। আর সেই সংগ্রামের উৎস ধরে ১৯ বছরের রক্তপথ পেরিয়ে ১৯৭১ সালে তার সমাপ্তিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়; সার্থক হয় রক্তস্নাত একুশে ফেব্রুয়ারির স্বপ্ন।
আর এই একুশে ফেব্রুয়ারির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যিনি সর্বপ্রথম কারাবরণ করেছিলেন, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যা আজকের প্রজন্মের অনেকেরই অজানা। অধিকাংশের ধারণা, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহিদ রফিক, শফিক, বরকত, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের সফলতা। এছাড়াও ইতিহাস বিকৃতিকারীদের ঘনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্টি হয়েছিল নানা বিতর্ক। প্রকৃত ইতিহাস এবং সত্য কালোমেঘে আচ্ছাদিত হয়েছিল ষড়যন্ত্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে।
কিন্তু মাতৃভাষা আন্দোলনের এই সফলতা একদিনে আসেনি। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কুমিল্লার বাঙালি প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে পরিষদের ব্যবহারিক ভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব করলে মুসলিম লীগের নেতাদের বিরোধিতায় তা বাতিল হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ তারিখের সভায় সিদ্ধান্ত হয়-ভাষার দাবিতে ৭ মার্চ ঢাকায় ও ১১ মার্চ দেশের সর্বত্র ধর্মঘট পালন করা হবে।
তীব্র আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ। এদিন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ‘বাংলা ভাষা দিবস’ ঘোষণার পাশাপাশি এইদিনে পরিষদের ডাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। এটাই ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এ দেশে প্রথম সফল হরতাল। এই হরতালে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সুদূর গোপালগঞ্জ হতে ১০ মার্চ ঢাকায় আসেন, নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেফতার হন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হরতাল, পিকেটিংয়ের কারণে সাথীদের সাথে গ্রেপ্তার হলেও খুব সহজেই ছাড়া পেয়ে যান। কারণ এটিই ছিল তার জীবনের প্রথম গ্রেপ্তার। ছাড়া পেয়েই আবারও আন্দোলনকে বেগবান করতে ঝাপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। (সূত্র: মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’)।
ভাষাসৈনিক অলি আহাদ তার ‘জাতীয় রাজনীতি : ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫’ গ্রন্থে বলেন, ‘১১ মার্চের হরতাল কর্মসূচিতে যুবক শেখ মুজিব এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, এ হরতাল ও কর্মসূচি তার জীবনের গতিধারা নতুনভাবে প্রবাহিত করে।’ মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’ শীর্ষক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এটিই তার প্রথম গ্রেপ্তার।’ পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিলে নেতৃত্বদানের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পুনরায় গ্রেপ্তার হন এবং মুক্ত হন ’৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি।
অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণ পর্বে বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। ফলে স্বাভাবিক কারণেই ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে রাজপথে থেকে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে থেকেই আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন শেখ মুজিব এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। (সূত্র : ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, গাজীউল হক)।
ঐতিহাসিক বাংলা ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু উদ্বুদ্ধ হয়ে যথাযথ নেতৃত্ব প্রদান করেছেন, পুলিশি নির্যাতন সহ্য করে কারাবরণ করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। শুধু তাই নয়, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণ মুহূর্তে জেলে বসে অনশন ধর্মঘট করে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিব, যা বাংলা ভাষার আন্দোলনকে করেছিল বেগবান।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণের পর এর চেতনাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের একজন মন্ত্রী হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সমকালীন রাজনীতি এবং বাংলা ভাষার উন্নয়নে অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু বাংলা একাডেমিতে একটি সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘ভাষা-আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু হবে’ (সূত্র : দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১)। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করেন।
এটাই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বাংলা ভাষায় প্রণীত সংবিধান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মূল নায়ক ও স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভাষা আন্দোলনেরই সূদুরপ্রসারী ফলশ্রুতি।’ (সূত্র: দৈনিক সংবাদ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫)।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু বাংলা ভাষার একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে বাংলা ভাষার উন্নয়ন বিকাশে ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের সফল, সার্থক ও যোগ্য নেতা ছিলেন বলেই ভাষা সমস্যার সমাধানের ভার তার উপর অর্পিত হয়েছিল। এই মহান নেতা বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষাভাষীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আর তাই ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে তিনি যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন, তা ইতিহাসের পাতায় চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিশ্বসভায় বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এটাই ছিল প্রথম সফল উদ্যোগ। শুধু তাই নয়; ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে বাংলা ভাষায় বঙ্গবন্ধু যে অগ্নিঝরা ভাষণ প্রদান করেন, তা শুধু ভাষণই ছিল না; ছিল এক মহাকাব্য, ছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষেকে উজ্জীবিত করে বাংলাকে স্বাধীন করার মূলমন্ত্র।
হে নবীন এসো একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় নিজেকে উজ্জীবিত করি। দেশের উপর শএুতা আঘাত হানলে বাংলার দামাল ছেলেরা সদা প্রস্তুত।
Tags: ২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য