সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে ভাবসম্প্রসারণ 2024 Free

সেই ধন্য নরকুলে|সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে

 মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন

 ভাব – সম্প্রসারণ : মানুষের ঘরে জন্মালেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না । প্রকৃত মানুষ হতে চাই কঠিন অধ্যবসায় । এ সাধনায় উত্তীর্ণ মানুষই প্রকৃত মানুষ । সে ধন্য , সে আরাধ্য , পৃথিবীময় তার জয়গান , লােকের অন্তরে তার বাস , মনের মন্দিরে পায় পূজা , বেঁচে থাকে অনন্তকাল । যারা পরােপকারে জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে কীর্তি স্থাপন করে গেছেন তারা কীর্তিমান । তারা মরেও অমর হয়ে আছেন । মানুষ মরণশীল ; এটি চিরন্তন সত্য । তবুও যাঁরা কীর্তিমান তাঁরা তাঁদের সেবামূলক মহকর্মের মাধ্যমে মানবসমাজে বেঁচে থাকেন বহু যুগ ধরে । তাদেরকে সাধারণ মানুষেরা মনের মন্দিরে রেখে পূজা করে । মানুষ অমরত্ব প্রাপ্ত হয় তাঁর মহৎ কর্মের মাধ্যমে । কর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে সাধারণ মানুষের অন্তরে চিরদিন । অর্থাৎ যেসব মানুষ নিঃস্বার্থভাবে পরােপকারে আত্মনিয়ােগ করেন , মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন- মৃত্যুর পরেও তারা অমর হয়ে থাকেন মানুষের মাঝে । এভাবে কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব তাঁদের মহকর্মের জন্য অমরত্ব লাভ করেন । এসব লােকের দৈহিক মৃত্যু হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা অমর । সর্বদাই তাঁরা মানবের অন্তরে বিরাজ করেন । মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় । কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের জীবনাদর্শই যুগ যুগ ধরে মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে । সুতরাং তাদের মৃত বলে মনে হয় না ।

Read More; যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই ভাবসম্প্রসারণ 2024 Free

সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে: ভাবসম্প্রসারণ

“সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে”—এই পঙ্ক্তিটি আমাদের সম্পর্ক, স্মৃতি এবং মানুষের প্রতি মূল্যবোধের একটি গভীর চিত্র তুলে ধরে। এটি বোঝায় যে, কিছু মানুষ আমাদের জীবনে এমন ছাপ ফেলে যায় যা কখনো ভুলে যাওয়া যায় না। আসুন, এই ভাবনাটি আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি।

স্মৃতির শক্তি

প্রথমত, এই উক্তিটি স্মৃতির গুরুত্ব এবং তার স্থায়িত্বকে নির্দেশ করে।

• অবিস্মরণীয় প্রভাব: যারা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, তাদের স্মৃতি চিরকাল আমাদের মনে জাগ্রত থাকে। এই স্মৃতিগুলি আমাদের জীবনের দিশা নির্দেশ করে এবং আমাদের মনে শক্তি প্রদান করে।
• আবেগের সংযোগ: আমাদের জীবনের যেসব মানুষ আমাদের প্রভাবিত করে, তাদের সঙ্গে আমাদের আবেগের একটি গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কগুলো আমাদের মনের মন্দিরে স্থান পায়, যা আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।

মানুষের অবদান

“ধন্য নরকুলে”—এটি বোঝায় সেই সব মানুষের মূল্য, যারা আমাদের জীবনে বিশেষ স্থান অধিকার করে।

• সেবা ও সহায়তা: যে মানুষগুলো আমাদের জীবনে সাহায্য ও সেবা করে, তারা আমাদের অন্তরে একটি আলোকিত স্থান অধিকার করে। তারা যখনই আমাদের প্রয়োজন হয়, তখন তাদের অবদান আমাদের মনে থাকে।
• অনুপ্রেরণা: এই মানুষগুলো আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। তারা আমাদের নতুন পথে চলার জন্য উদ্দীপনা জোগায় এবং জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার সাহস দেয়।

মনের মন্দিরে স্থান

“মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন”—এটি বোঝায় যে, স্মৃতি ও সম্পর্ক আমাদের মনের গভীরে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রাখে।

• আধ্যাত্মিক সংযোগ: যারা আমাদের মনে বিশেষ স্থান পায়, তারা আমাদের আধ্যাত্মিক ও মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্মৃতি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য ও মানসিক শান্তি এনে দেয়।
• গভীর অনুভূতি: আমাদের মনের মন্দিরে সেই সব স্মৃতির স্থান থাকে যা আমাদের সুখ, দুঃখ, আশা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। এই অনুভূতিগুলি আমাদের জীবনে অর্থপূর্ণ করে।

সমসাময়িক প্রেক্ষাপট

এই পঙ্ক্তিটি আজকের সমাজে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বর্তমান যুগে সম্পর্কগুলো প্রায়ই টেকসই হয় না, কিন্তু কিছু মানুষ সেই স্থায়ী প্রভাব ফেলে যায়।

• বন্ধুত্বের মূল্য: সমাজে যে সম্পর্কগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেগুলো আমাদের জীবনের মূল্যবোধের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে বন্ধুত্ব, পরিবার এবং আন্তরিকতা মিশ্রিত হয়।
• প্রভাবিত করার ক্ষমতা: যে মানুষগুলো আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, তারা আমাদের জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে যায়। তাদের প্রভাব আমাদের চলার পথে নির্দেশিত করে।

উপসংহার

“সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে” আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কিছু মানুষ আমাদের জীবনে চিরকালীন স্মৃতি ও প্রভাব ফেলে। আসুন, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং তাদের শিক্ষা ও অনুপ্রেরণাকে হৃদয়ে ধারণ করি। এই সম্পর্কগুলো আমাদের জীবনে আলো ছড়ায় এবং আমাদের চলার পথে শক্তি যোগায়। যারা আমাদের মনে এমনভাবে জায়গা করে নেয়, তাদের অবদান কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয়, কারণ তারা আমাদের জীবনের অমূল্য রতন।

মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে , তার বয়সের মধ্যে নয় । কত কোটি কোটি মানুষ এ পৃথিবীতে এসেছে কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর কেউ তাদেরকে মনে রাখতে পারে নি । তারা ভেসে গিয়েছে কালস্রোতে । তবু যেসব কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গ মানুষের সেবায় আত্মনিয়ােগ করে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা অমর । তাই সক্রেটিস , প্লেটো , গ্যালিলিও প্রমুখ কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের মৃত্যু হয়েছে বহুদিন পূর্বে কিন্তু তারা আজও চিরভাস্বর মানুষের হৃদয়ে । কীর্তিমান ব্যক্তিগণই মানুষের মধ্যে ধন্য । সর্বজনের মনের মন্দিরে তারাই নিত্য স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকেন ।

টাগ: সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে ভাবসম্প্রসারণ, সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে  মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন ভাবসম্প্রসারণ ,সেই ধন্য নরকুলে , সেই ধন্য নরকুলে