Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা

    একুশের সেরা কবিতা

    আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম একুশের সেরা কবিতা। আপনারা যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম কিছু মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা আশা করি আমাদের কবিতার কালেকশনটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ১

    বাংলা ভাষা

    অতুলপ্রসাদ সেন

    মোদের গরব, মোদের আশা,

    আ-মরি বাংলা ভাষা!

    তোমার কোলে,

    তোমার বোলে,

    কতই শান্তি ভালোবাসা!

    কি যাদু বাংলা গানে!

    গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে,

    গেয়ে গান নাচে বাউল,

    গান গেয়ে ধান কাটে চাষা!

    বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন্,

    হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন-

    ঐ ফুলেরই মধুর রসে,

    বাঁধলো সুখে মধুর বাসা!

    বাজিয়ে রবি তোমার বীণে,

    আনলো মালা জগৎ জিনে!

    তোমার চরণ-তীর্থে আজি,

    জগৎ করে যাওয়া-আসা!

    ঐ ভাষাতেই নিতাই গোরা,

    আনল দেশে ভক্তি-ধারা,

    আছে কৈ এমন ভাষা,

    এমন দুঃখ-শ্রান্তি-নাশা?

    ঐ ভাষাতেই প্রথম বোলে,

    ডাকনু মায়ে ‘মা, মা’ বলে;

    ঐ ভাষাতেই বলবো হরি,

    সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা!

    মোদের গরব, মোদের আশা,

    আ-মরি বাংলা ভাষা!

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০২

    বঙ্গভূমি ও বঙ্গভাষা

    কায়কোবাদ

    ‘বাংলা আমার মাতৃভাষা

    বাংলা আমার জন্মভূমি।

    গঙ্গা পদ্মা যাচ্ছে ব’য়ে,

    যাহার চরণ চুমি।

    ব্রহ্মপুত্র গেয়ে বেড়ায়,

    যাহার পূণ্য-গাথা!

    সেই-সে আমার জন্মভূমি,

    সেই-সে আমার মাতা!

    আমার মায়ের সবুজ আঁচল

    মাঠে খেলায় দুল!

    মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা

    আমার মায়ের ফুল-বাগানে,

    ফুটছে কতই ফুল!

    শত শত কবি যাহার

    গেয়ে গেছে গাথা!

    সেই-সে আমার জন্মভূমি,

    সেই-সে আমার মাতা!

    আমার মায়ের গোলা ছিল,

    ধন ধান্যে ভরা!

    ছিল না তার অভাব কিছু,

    সুখে ছিলাম মোরা!

    বাংলা মায়ের স্নিগ্ধ কোলে,

    ঘুমিয়ে রব আমি!

    বাংলা আমার মাতৃভাষা

    বাংলা জন্মভূমি!’

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা আবৃত্তি

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা আবৃত্তির জন্য যারা কবিতা খুঁজছেন আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০৩

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

    কবি শামসুর রাহমান

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে

    আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

    আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

    সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,

    সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।

    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

    শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো

    দানবের মত চিত্কার করতে করতে

    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

    ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল

    আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।

    তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।

    তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার

    ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।

    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে

    আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

    আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

    স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো

    উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের

    দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।

    স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

    মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে

    নড়বড়ে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।

    স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

    হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে

    বসে আছে পথের ধারে।

    মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা

    তোমার জন্যে,

    সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,

    কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,

    মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,

    গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝড়ে

    রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস

    এখন পোকার দখলে

    আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো

    সেই তেজী তরুণ যার পদভারে

    একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে —

    সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

    পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জলন্ত

    ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,

    মতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক

    এই বাংলায়

    তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

    ছোটদের জন্য একুশের কবিতা

    ছোটদের জন্য একুশের কবিতা দিলাম আপনারা যারা ছোট সোনামনিদের জন্য একুশে ফ্রেব্রুয়ারীর জন্য কবিতা লাগবে।আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বিভিন্ন স্কুল কলেজে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাই আপনাদের যাদের কবিতা প্রয়োজন এখান থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০৪

    বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা

    শামসুর রাহমান

    নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।

    মমতা নামের প্রুত  প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়

    ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে

    শিউলিশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহন

    তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,

    অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,

    ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই

    ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।

    আজন্ম আমার সাথী তুমি,

    আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে,

    তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে

    আমারই বন্দরে।

    গলিত কাচের মতো জলে ফাত্না দেখে দেখে রঙিন মাছের

    আশায় চিকন ছিপ ধরে গেছে বেলা। মনে পড়ে কাঁচি দিয়ে

    নক্সা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে

    সেই কবে আমি হাসিখুশির খেয়া বেয়ে

    পৌঁছে গেছি রত্নদীপে কম্পাস বিহনে।

    তুমি আসো আমার ঘুমের বাগানেও

    সে কোন্ বিশাল

    গাছের কোটর থেকে লাফাতে লাফাতে নেমে আসো,

    আসো কাঠবিড়ালির রূপে,

    ফুল্ল মেঘমালা থেকে চকিতে ঝাঁপিয়ে পড়ো ঐরাবত সেজে,

    সুদূর পাঠশালার একান্নটি সতত সবুজ

    মুখের মতোই দুলে দুলে ওঠো তুমি

    বার বার কিম্বা টুকটুকে লঙ্কা ঠোঁট টিয়ে হ’য়ে

    কেমন দুলিয়ে দাও স্বপ্নময়তায় চৈতন্যের দাঁড়।

    আমার এ অক্ষিগোলকের মধ্যে তুমি আঁখিতারা।

    যুদ্ধের আগুণে,

    মারীর তাণ্ডবে,

    প্রবল বর্ষায়

    কি অনাবৃষ্টিতে,

    বারবনিতার

    নূপুর নিক্কনে

    বনিতার শান্ত

    বাহুর বন্ধনে,

    ঘৃণায় ধিক্কারে,

    নৈরাজ্যের এলো-

    ধাবাড়ি চিত্কারে,

    সৃষ্টির ফাল্গুনে

    হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মিলিত সর্বক্ষণজাগরণে।

    তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার ?

    উনিশ শো’ বাহন্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি

    বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।

    সে ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হ’লে আমার সত্তার দিকে

    কতো নোংরা হাতের হিংশ্রতা ধেয়ে আসে।

    এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি,

    এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস !

    তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,

    বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।

    মাতৃভাষা নিয়ে বিখ্যাত কবিতা

    মাতৃভাষা নিয়ে বিখ্যাত কবিতা সমূহ আসুন পড়ে নেই।মাতৃভাষা নিয়ে বিখ্যাত কিছু কবিতা আশা করি আপনাদের পছন্দ হবে।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০৫

    অভিশাপ দিচ্ছি

    শামসুর রাহমান

    না আমি আসিনি ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রাচীন পাতা ফুঁড়ে,
    দুর্বাশাও নই, তবু আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে অভিশাপ দিচ্ছি।
    আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে
    মগজের কোষে কোষে যারা পুঁতেছিল
    আমাদেরই আপন জনেরই লাশ দগ্ধ, রক্তাপ্লুত
    যারা গণহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
    আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু সেই সব পশুদের।
    ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে নিমেষে ঝাঁ ঝাঁ বুলেটের বৃষ্টি
    ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না।
    হত্যাকে উৎসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে ক্যাম্পাসে বাজারে
    বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভৎস গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে,
    আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না কামনা।
    আমাকে করেছে বাধ্য যারা
    আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে যেতে
    ভাসতে নদীতে আর বনেবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে,
    অভিশাপ দিচ্ছি, আমি সেইসব দজ্জালদের।
    অভিশাপ দিচ্ছি ওরা চিরদিন বিশীর্ণ গলায়
    নিয়ত বেড়াক বয়ে গলিত নাছোড় মৃতদেহ,
    অভিশাপ দিচ্ছি প্রত্যহ দিনের শেষে ওরা
    হাঁটু মুড়ে এক টুকরো শুকনো রুটি চাইবে ব্যাকুল
    কিন্তু রুটি প্রসারিত থাবা থেকে রইবে দশ হাত দূরে সর্বদাই।
    অভিশাপ দিচ্ছি ওদের তৃষ্ণায় পানপাত্র প্রতিবার
    কানায় কানায় রক্তে উঠবে ভরে, যে রক্ত বাংলায়
    বইয়ে দিয়েছে ওরা হিংস্র জোয়ারের মত।
    অভিশাপ দিচ্ছি আকণ্ঠ বিষ্ঠায় ডুবে ওরা অধীর চাইবে ত্রাণ
    অথচ ওদের দিকে কেউ দেবে না কখনো ছুঁড়ে একখন্ড দড়ি।
    অভিশাপ দিচ্ছি স্নেহের কাঙ্গাল হয়ে ওরা
    ঘুরবে ক্ষ্যাপার মতো এ পাড়া ওপাড়া,
    নিজেরি সন্তান প্রখর ফিরিয়ে নেবে মুখ, পারবে না চিনতে কখনো;
    অভিশাপ দিচ্ছি এতোটুকু আশ্রয়ের জন্য, বিশ্রামের কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরবে ওরা। প্রেতায়িত সেই সব মুখের উপর
    দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটি কপাট,
    অভিশাপ দিচ্ছি…
    অভিশাপ দিচ্ছি,….
    অভিশাপ দিচ্ছি….

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০৯

    মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা

    ডাক

    শ্রীজাত

    ভাষা আমার শরীর। যেমন আকাশ মাটি জলও –
    তারও আছে শিকড়, তুমি ফুলের কথাই বলো।
    ‘অ’ বললে তাই অহং বুঝি, ‘আ’ বললে তাই আদর
    আমার ভাষায় বসত করে অজস্র বেরাদর।
    সবাই মিলে চড়ুইভাতির বর্ণমালা খুলি,
    সেখানে কেউ ওঠায় যদি শাসনে অঙ্গুলি
    শেখায়, কে কী বলবে এবং বলবে না কোন কথা,
    আমার ভাষায় চার অক্ষরে তৈরি নীরবতা
    ভাঙতে পারে তখন। জেনো চড়তে পারে গলা।
    খোঁপায় শোভা পেলেও সে তো প্রতিবাদের পলাশ –
    পথে লুটোয় ইচ্ছেমতো, দিগন্তে তার আভা…
    কেউ বলে সুস্বাগতম আর কেউ বলে মারহাবা
    এসব ছাড়াও অন্য কথা বলে যে নিন্দুকে
    দেখছে না সে ভাষার রেখা, নাগরিকের মুখে?
    দেখছে না সে, ভাতের কাছে হার মেনেছে মানুষ?
    আবহমান খিদের সামনে ভাষাও নতজানু…
    সেই ভাষাতেই ডাকছি তোমায়, ভাতের কাছে এসো
    স্পর্শে এবার বরণ করি, সব অভিমান শেষ হোক।
    থাকুক কেবল মনের কথা, পড়ন্ত বিশ্রামে
    ভিজিয়ে দিক বর্ণমালা, বৃষ্টি যেমন নামে –
    তোমার চোখের বানান করি, ভুল হলে তাও বলো
    ভাষায় জাগুক এই পৃথিবীর ঘুমন্ত অঞ্চলও
    বিস্তৃত সেই উপত্যকার দু’চারটে অক্ষরে
    তোমায় যেন ডাকতে পারি, একুশজন্ম পরে!

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ১০

    উনিশে মে আর একুশে ফেব্রুয়ারি

    অমিতাভ দাশগুপ্ত

    বুকের রক্ত মুখে তুলে যারা মরে

    ওপারে ঢাকায় এপারের শিলচরে

    তারা ভালোবাসা-বাংলাভাষার জুড়ি—

    উনিশে মে আর একুশে ফেব্রুয়ারি।

    সিঁদুর কুড়িয়ে নেওয়া যায় এক আলো

    প্রাণের পুণ্যে হয়ে ওঠে জমকালো

    সে-আলোয় দেয় মারের সাগর পাড়ি

    উনিশে মে আর একুশে ফেব্রুয়ারি।

    সে-আলো টলে না মৃত্যুর কালো ঝড়ে

    তর্জনি তুলে জেগে থাকে ঘরে ঘরে,

    দুলিয়ে গলায় তাজা বুলেটের মালা

    পার হয়ে শত শ্মশান ও কারবালা

    হাজার মুখের মিছুলে দিয়েছে পাড়ি

    উনিশে মে আর একুশে ফেব্রুয়ারি।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০৬

    তুমি কোনোদিন কাউকে বলো না

    জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
    তুমি কোনোদিন কাউকে বলো না—–
    কবিতা এখন আমাকে ফাঁকি দিয়ে বর্ণমেলার হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে
    টি এস সি থেকে দোয়েল চত্বর,
    হাকিম চত্বর,
    বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ!
    তবে
    অপরাজেয় বাংলা থেকে বটতলা, ওরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই;
    পিছিয়ে নেই
    আশেপাশের দু’একটি চায়ের স্টল, ফুটপাত, সব্যসাচী দূর্বাঘাস কেউই;
    তারাও যেন প্রত্যেকেই এক একটি জীবন্ত কবিতা!
    তবে এতোসুখের(!) মাঝেও আরেকটি কথা না বলে পারছি না!
    তুমি কোনোদিন কাউকে বলো না—-
    কেউ একজন স্বর্গে গিয়েছিলেন– ভাষা শহীদদের সাথে দেখা হয়নি!
    কে জানি কানে কানে বলে দিয়েছে
    প্রতিদিনই মেলায় এসে চুপচাপ বসে থাকেন রফিক,জব্বারের অতৃপ্ত আত্মা!
    তাঁরা আবারও বুকের তাজা খুন ঢেলে দিতে চান
    আবারও আরেকটি ৮ই ফাগুন ফিরিয়ে আনতে চান
    আবারও আরও গাঢ় রঙে রাঙিয়ে দিতে চান শিমুল, কৃষ্ণচূড়া!
    তুমি কোনোদিন কাউকে বলো না—-
    আরও জানতে পারলাম, তাঁরা নাকি আর স্বর্গে ফিরে যেতে চান না!
    কেবল প্রত্যয়ী বুকে, শকুন চোখে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করেন,
    ধূলিকণার মতো তাদের উড়িয়ে নিতে চায় দমকা বাতাস,
    তাঁরা এতোটুকু নড়েন না! হিমগিরির মতো ঠায় বসে থাকেন।
    আগ্নেয়গিরি বুকের ভেতর লাভা হয়ে ওঠে বর্ণমালা,
    তবু তাঁরা কিছু বলেন না।
    নীরবে-নিভৃতে এক বঙ্গোপসাগর দীর্ঘশ্বাস
    বুকের গভীরে চাপা দিয়ে রাখেন, কখন মহাবিস্ফোরণের মাহেন্দ্রক্ষণ ফিরে আসে!
    কার কাছে জানি শুনেছেন,
    আমরা নাকি এখন অ,আ,ম বলতে লজ্জা পাই!
    উড়ে এসে জুড়ে বসা পরদেশি বাবুর এ বি সি বলতে পেরে গৌরব কামাই!
    তুমি কোনোদিন কাউকে বলো না—-
    আমরা নাকি ভুলে যেতে বসেছি বাংলা ও বাঙ্গালির ইতিহাস?
    তাঁরা অবাক হয়ে কেবলই ভাবেন,
    এতোকিছুর পরেও আমরা কিভাবে চুপ করে আছি!
    আমরা কি তবে আর বাঙালি নেই? এই প্রশ্ন তাদের কুরে কুরে খায়।
    তবে গোপন খবরও আছে একটা, কোনোদিন কাউকে বলো না—
    আমি কেবল তোমাকেই চুপি চুপি বলে রাখছি!
    তুমি কোনোদিন কাউকে বলো না— ——-
    শুনেছি, মা ডাক তাঁরা কখনও ভুলতে দেবেন না
    ভুলতে দেবেন না, মায়ের নাড়ীর সাথে বাংলা ভাষার অবিচ্ছেদ্য শেকড়ের টান!
    কোনোদিন— কোনোমতেই মাতৃভাষার অমর্যাদা সহ্য করবেন না!
    তৈরি হয়েই আছে তাদের বুকের সব সামান,
    যে কোনো সময় একসাথে করে তারস্বরে চিৎকার করে উঠবেন,
    কোনো ভয় নেই— ওরে কোনো ভয় নেই,
    এই নাও———- বুক, দাগাও কামান!!
    তুমি কোনোদিন কাউকে বলো না—-
    আরও একটা পাক্কা খবর আছে, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে!
    তাঁরা এবার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবেন,
    এরই ধারাবাহিকতায়
    তাঁরা এখন শহীদ মিনারে গণঅনশনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন!
    তাদের সাথে আছেন সর্বজনাব সজনে পাতা, জালি লাউয়ের ডগা, মটরশুটি,
    দোয়েল-শ্যামা, ময়না-টিয়া সবাই;
    আরও আছেন এই বাংলার আকাশ, এই বাংলার বাতাস, ধূলিকণা—
    সবাই,
    সবাই সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন
    বুলেট-বোমার কোনো তোয়াক্কা নেই
    কেবল আবারও শহীদ হওয়ার আকাংখারা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।।

    সিকান্দার আবু জাফরের একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা

    সিকান্দার আবু জাফরের একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা এই পোস্টটির মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০৭

    ঊনসত্তরের ছড়া 

    আল মাহমুদ
    ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !
    শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে
    দুয়োর বেঁধে রাখ।
    কেন বাঁধবো দোর জানালা
    তুলবো কেন খিল ?
    আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে
    ফিরবে সে মিছিল।
    ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !
    ট্রাকের মুখে আগুন দিতে
    মতিয়ুরকে ডাক।
    কোথায় পাবো মতিয়ুরকে
    ঘুমিয়ে আছে সে !
    তোরাই তবে সোনামানিক
    আগুন জ্বেলে দে।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০৮

    একুশের কবিতা

    আল মাহমুদ

    ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
    দুপুর বেলার অক্ত
    বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
    বরকতের রক্ত।
    হাজার যুগের সূর্যতাপে
    জ্বলবে এমন লাল যে,
    সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
    কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
    প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
    ছড়াও ফুলের বন্যা
    বিষাদগীতি গাইছে পথে
    তিতুমীরের কন্যা।
    চিনতে না কি সোনার ছেলে
    ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
    রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
    মুক্ত বাতাস কিনতে ?
    বিজ্ঞাপন
    পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
    ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
    ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
    পরলো তারই ভগ্নী।
    প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
    আমায় নেবে সঙ্গে,
    বাংলা আমার বচন, আমি
    জন্মেছি এই বঙ্গে।

    আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা

    আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা যাদের লাগবে এখান থেকে ফ্রীতে ডাউনলোড করে নিন।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা নং ০১

    আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

    আবদুল গাফফার চৌধুরী

    আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

    আমি কি ভুলিতে পারি

    ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু ঝরা এ ফেব্রুয়ারি

    আমি কি ভুলিতে পারি

    আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

    আমি কি ভুলিতে পারি।।

    জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা

    শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,

    দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী

    দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?

    না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই

    একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।

    সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে

    রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;

    পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,

    এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

    সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,

    তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা

    ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে

    ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে

    ওরা এদেশের নয়,

    দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়

    ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি

    একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

    তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি

    আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী

    আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে

    জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে

    দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি

    একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।

    Leave a comment